West Bengal : একটা বাচ্চা ঘুম থেকে একটু দেরিতে উঠছিল। কানে কম শুনত। আর এই কারণেই কি তাকে খুন করা হল? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর থানার অন্তর্গত পাটুল গ্রামে রবিবার বিকেলে এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেল। মেয়ের বয়স মাত্র ৯ বছর। নাম আফরিন পারভিন। বাবা আবদুল আজিজ, পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। পরিবারে স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। কিন্তু সেই সংসারই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল রবিবার।
বাবার চোখে জল, স্তব্ধ চারপাশ
ঘটনার পর মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাবা আবদুল আজিজ। সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি জানান, “আমার মেয়ে একটু কানে কম শোনে। সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠত। আমি ওকে বলি আমি কাজে যাচ্ছি, ও ইশারায় বলে ঠিক আছে। ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।” তবে স্ত্রী এই কাজ করেছেন কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি তিনি।
প্রতিবন্ধকতাই কি মৃত্যুর কারণ?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আফরিন ছিল এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। সে কানে কম শুনত। এই কারণে মা রিম্পা বিবির সঙ্গে তার প্রায়শই বিবাদ হত। তবে কেউ কখনও ভাবেননি এই অভিমান এত বড় পরিণতি নেবে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন দুপুরে বাড়িতে কেউ ছিলেন না। এই সুযোগেই মা allegedly বালিশচাপা দিয়ে খুন করেন আফরিনকে। সন্ধ্যায় বাড়ির লোকেরা এসে মেয়ের নিথর দেহ দেখতে পান।
পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্ত মাকে
খবর পেয়ে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। অভিযুক্ত মা রিম্পা বিবিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। থানার আইসি শান্তনু মিত্র জানিয়েছেন, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
গ্রামে শোক ও ক্ষোভের ছায়া
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে নেমে এসেছে গভীর শোক ও তীব্র উত্তেজনা। কেউ কেউ বলছেন, “ওই মেয়ে একটু অস্বাভাবিক হলেও মায়ের এমন কাজ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।” আবার অনেকে বলছেন, “মানসিক চাপ বা হতাশা থেকেও এই কাজ করে থাকতে পারেন তিনি।” তবে যাই হোক না কেন, একজন অসহায় শিশুর মৃত্যু আর একজন মায়ের হাতেই—এমন নৃশংসতা এলাকায় আগে কখনও ঘটেনি বলেই দাবি করছেন স্থানীয়রা।
প্রশ্ন উঠছে—কোথায় ছিল সমাজ? কোথায় ছিল সহানুভূতি?
একটা শিশু বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হলেই কি তাকে বোঝা মনে করতে হবে? সমাজ কীভাবে এই পরিবারকে সাহায্য করছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন কি না, তাঁর কোনও চিকিৎসা হচ্ছিল কি না, সে নিয়েও তদন্ত করছে পুলিশ। এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, শিশু ও নারী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা কতটা সচেতন?
আফরিন আর নেই। একটা নিষ্পাপ জীবন নিভে গেল এক মর্মান্তিক ঘটনায়। এখন শুধু তদন্ত নয়, দরকার আরও বেশি করে সহানুভূতির, বোঝাপড়ার, ও মনোরোগ সচেতনতার। না হলে, এই ধরনের ঘটনা হয়তো আরও লুকিয়ে আছে অন্ধকার ঘরের কোনে…