৮ এপ্রিল জঙ্গিপুরে উত্তেজনার পর পুলিশ ওয়াকফ সংক্রান্ত বিক্ষোভের অনুমতি দেয়নি। অথচ ১০ তারিখে শিক্ষক নিয়োগের রায় ঘিরে প্রতিবাদের নামে র্যালি হয়, যা দ্রুত রূপ নেয় ওয়াকফ বিরোধী মিছিলে। ১১ এপ্রিল ঘটে সহিংসতা। দুটি র্যালির ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে—একই যুবকরা অংশ নিয়েছে, স্পষ্ট পরিকল্পিত মবিলাইজেশন।
NGO নয়, মূলত চরমপন্থার মুখোশ
‘All NGOs United’ ব্যানারের আড়ালে ছিল কারা?
তদন্তে উঠে এসেছে দুটি নাম—‘আসোময়ের আলোর বাতি’ ও ‘গোল্ডেন স্টার গ্রুপ’। এদের নেতৃত্বে ছিল কৌশার, মোস্তাকিন ও রাজেশ শেখ। যদিও পুলিশ বলছে তারা পলাতক, কিন্তু স্থানীয়রা জানাচ্ছে, তারা দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রাজেশ শেখ শুধু NGO নেতা নয়, তৃণমূল যুব কমিটির সদস্যও। তার সঙ্গে PFI ও SDPI-র আগের সম্পর্ক ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের দাবি।
রক্তদান নয়, ছিল মগজধোলাইয়ের প্ল্যান
কিশোরদের কীভাবে ব্যবহার করা হল?
কিশোরদের NGO-র মাধ্যমে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এক কিশোর জানিয়েছে, “কৌশার ভাই ফোন করে বলল চলে আয়।” ভিডিওতে দেখা গেছে, কৌশার ও মোস্তাকিন মিছিলের সময় নেতৃত্ব দিচ্ছে, ফোনে নির্দেশ দিচ্ছে। অনেকেই জানত না ওয়াকফ কী, নামাজ পর্যন্ত পড়তে জানত না, কিন্তু হাতে লাঠি আর বুকভরা রাগ নিয়ে নেমেছিল রাস্তায়।
উঠছে টাকা-পয়সা নিয়েও প্রশ্ন
কে দিল অর্থসাহায্য?
কিশোরদের কেউ টাকা দেয়নি বলে দাবি, কিন্তু মিছিলে বহুবার ‘সম্প্রদায়ের জন্য চাঁদা’ চাওয়া হয়েছে। অর্থ আসে কোথা থেকে, কোথায় যায়—তা কেউ জানে না, কোনও অডিট নেই।
মসজিদের মাইকে ডাক, কিন্তু কে দিল নির্দেশ?
দু’জন স্থানীয় ইমাম জানিয়েছেন, নাম না জানা কিছু ব্যক্তি এসে তাদের বলেছিল মসজিদ থেকে ঘোষণা করতে। শুক্রবারের নামাজের আগে, যাতে ভিড় বেশি হয়। ইমামদের একজন জানালেন, কে পাঠিয়েছে জানেন না, শুধু বুঝেছিলেন, তার সম্প্রদায়েরই লোক।
বাংলাদেশি সংযোগ ও ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে বিষাক্ত বার্তা
১০ এপ্রিলের ঘটনার আগে একটি জালসায় যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক মৌলানা। এরপর ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে উস্কানিমূলক বার্তা—“হাতিয়ার তুলে নাও”, “ছেলেদের সামনের সারিতে রাখো।” DIB অফিসার রাজীব জানিয়েছেন, “ঘরে বসেই চরমপন্থার শিক্ষা নিচ্ছে ছেলেরা। মাদ্রাসা কেন্দ্রিক এই নেটওয়ার্ক ভয়ংকর।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
১২ এপ্রিল সহিংসতা চরমে ওঠে, আর পুলিশ তখন কার্যত নীরব দর্শক। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কোথাও কোথাও পুলিশ সহিংসদের সাহায্য করছে। একই সঙ্গে তদন্তে উঠে এসেছে, মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে স্কুল ব্যাগে করে পাথর নিয়ে আসছিল কিশোররা—পরিকল্পনা ছিল স্পষ্ট।
মৃত্যু আর আতঙ্কের শহর
১২ এপ্রিলের হিংসায় প্রাণ যায় হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর ছেলে চন্দনের। সুতিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় যুবক ইজাজ।
মুর্শিদাবাদের সহিংসতা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। যেখানে নিষিদ্ধ সংগঠন, NGO, রাজনৈতিক মদত ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা একসঙ্গে কাজ করেছে। তদন্ত চলছে, কিন্তু বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই নেটওয়ার্ককে আদৌ ভাঙা যাবে কি