পাঁশকুড়ার সাধারণ এক স্কুলপড়ুয়া ছাত্র কৃষ্ণেন্দু দাসের মৃত্যু এখন রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্র স্বপ্ন দেখত বড় হওয়ার, কিন্তু এক অপবাদ, কিছু অপমান আর সমাজের নির্মম দৃষ্টিভঙ্গিই হয়তো সেই স্বপ্নকে ছিঁড়ে ছুঁড়ে ফেলল।
চিপস চুরির মিথ্যে অভিযোগ, প্রকাশ্যে অপমান আর শাস্তির নামে কান ধরে ওঠবস—এই সবকিছু যেন একসাথে ভেঙে চুরমার করে দিল এক কোমল হৃদয়কে। কিন্তু সেই মৃত্যুর পরই সামনে আসে একটি চিরকুট, যেখানে লেখা ছিল—“আমি কুরকুরাটি কুড়িয়ে পেয়েছিলাম, চুরি করিনি।”এবার সেই চিরকুটকে ঘিরে উঠেছে বিরাট প্রশ্ন! কে লিখেছে চিরকুটটা?
চিরকুট ঘিরে উঠছে বড় প্রশ্ন, পুলিশের নজরে হাতের লেখার গরমিল
মৃত্যুর আগে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র কৃষ্ণেন্দুর লেখা চিরকুট আসলেই কৃষ্ণেন্দু লেখা কিনা তা ঘিরেই এখন শুরু হয়েছে নতুন রহস্য। কৃষ্ণেন্দুর মৃত্যুর পর তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া কাগজটিতে তার নাম, রোল নম্বর ও শ্রেণি লেখা ছিল। নিচে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল সেই চিরচেনা লাইনটি—যা এখন গোটা ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। কারণ, তদন্তে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—উপরের লেখার স্টাইল ও নিচের লেখার মধ্যে স্পষ্ট গরমিল দেখা যাচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, হয়তো ওই লেখা কৃষ্ণেন্দুর নয়।
পাঁশকুড়া থানার তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে হস্তলেখা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া হবে। যদি প্রমাণ হয় ওই চিরকুট অন্য কেউ লিখেছে, তাহলে এটি নিছক আত্মহত্যা নয়—বরং অন্য কিছু।
সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে আসল সত্য, চুরি নয়, ছিল কুড়িয়ে পাওয়া
১৮ই মে শুভঙ্কর দীক্ষিত নামক এক সিভিক ভলান্টিয়ারের দোকানে গিয়েছিল কৃষ্ণেন্দু। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে, রাস্তার পাশ থেকে পড়ে থাকা চিপসের প্যাকেট কুড়িয়ে নিয়েছিল সে। তবুও তার ওপর পড়ে চুরির অপবাদ। এরপর শারীরিক ও মানসিক অপমান। সব মিলিয়ে তৈরি হয় ভয়ঙ্কর মানসিক চাপ। এর ফলেই হয়তো এই চরম সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেই নোট যদি কৃষ্ণেন্দুর লেখা না হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠছে— কেউ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করেছিল এই চিরকুট? মৃত্যুর পর? কেন? কারা?
অভিযোগের তির সিভিক ভলান্টিয়ার ও তার পরিবারের দিকে
মৃতের মা সুমিত্রা দাস ইতিমধ্যেই থানায় শুভঙ্কর ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সমস্ত তথ্য ও ফুটেজ এখন পুলিশের হাতে। তদন্তকারীদের কথায়, যদি প্রমাণ হয় আত্মহত্যার নোটটি জাল, তবে মামলা নতুন মোড় নিতে পারে।