রোগীকে ভর্তি করার পর নির্ধারিত প্যাকেজের বাইরে অতিরিক্ত টাকা দাবি করাকে বহুদিন ধরেই প্রশ্নের মুখে ফেলছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ভূমিকা। রোগীর পরিবারকে চাপে ফেলে একাধিক খাতে অজস্র টাকা আদায়ের অভিযোগ বহুবার সামনে এসেছে। অবশেষে সেই স্বজনপোষণ আর চলবে না।
বিধানসভায় পাশ হল সংশোধনী বিল
বুধবার রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট, সংশোধনী বিল’। এই সংশোধনী অনুযায়ী, এখন থেকে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম প্যাকেজে নির্ধারিত পরিষেবার বাইরে কোনও অতিরিক্ত অর্থ রোগীর পরিবারের কাছ থেকে দাবি করতে পারবে না।
আইন ভাঙলে কঠোর শাস্তি
স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, আইন অমান্য করে কেউ অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমনকী লাইসেন্স বাতিল বা জরিমানার মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। রোগী পরিবারকে ঠকানোর কোনও জায়গা আর থাকবে না।
কি কি অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্যাকেজে?
প্যাকেজের মধ্যে কী কী পরিষেবা থাকবে, তা পরিষ্কারভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগেই জানাতে হবে। চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, ওষুধ, খাবার, কেবিন ভাড়া, নার্সিং পরিষেবা—সব কিছু নির্দিষ্ট তালিকা অনুযায়ী প্যাকেজে থাকবে। এই তালিকার বাইরে কোনও খরচ দাবি করা যাবে না।
হাসপাতালগুলির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
বিগত এক দশকে একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের পরিবারকে চূড়ান্ত আর্থিক চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ICU, ভেন্টিলেটর বা বিশেষ কনসালটেশন দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিল বাড়ানো হয়েছিল। এবার সেই অপচেষ্টা বন্ধ করতে তৎপর রাজ্য সরকার।
রোগীর অধিকারে স্বচ্ছতা
এই নতুন সংশোধনী পাস হওয়ার ফলে রোগীদের অধিকারে আরও স্বচ্ছতা আসবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশারদরা। চিকিৎসা পরিষেবাকে বাণিজ্যিকতা থেকে সরিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেরানোর চেষ্টাই করছে এই উদ্যোগ।
কোথায় অভিযোগ জানাবেন?
যদি কোনও হাসপাতাল এই নিয়ম না মানে বা প্যাকেজের বাইরে টাকা দাবি করে, তবে সংশ্লিষ্ট জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক বা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরে লিখিত অভিযোগ জানানো যাবে। রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের তরফেও একটি নির্দিষ্ট হেল্পলাইন খোলা হবে বলে জানা গিয়েছে।
সরকারের কড়া বার্তা
স্বাস্থ্য মন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, “রোগীকে পরিষেবা দেওয়া একটি সামাজিক দায়িত্ব। কেউ সেটিকে মুনাফার কারখানায় পরিণত করলে তা বরদাস্ত করা হবে না। এই আইন তারই বার্তা।” তিনি আরও জানান, প্রয়োজনে আরও আইনগত সংশোধনী এনে এই ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হবে।
এই সংশোধনী আইন নিঃসন্দেহে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় এক নতুন অধ্যায় সূচিত করবে। রোগী ও তার পরিবারের আর্থিক শোষণ রুখতে এই আইনি পদক্ষেপ কেবল সময়োপযোগী নয়, অত্যন্ত জরুরি। এখন দেখার, বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এই আইন এবং কত দ্রুত মিলতে থাকে এর সুফল।