Selfie Death : দক্ষিণ ২৪ পরগনার রবীন্দ্রনগর। গঙ্গার ধারে মা তারা ঘাট। মন ভালো রাখতে মোটরবাইক নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন তিন বন্ধু। গার্ডেনরিচ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছিলেন গঙ্গার ধারে। উদ্দেশ্য ছিল বন্ধুদের সঙ্গে একটু সময় কাটানো, তার সঙ্গে কিছু ছবি তোলা। কিন্তু সেই মুহূর্তটাই বদলে দিল সবকিছু।
জানা গেছে, তিন বন্ধু মিলে একটি পিলারের ওপর উঠে সেলফি তুলছিলেন। আচমকা একজনের পা পিছলে পড়ে যান নদীতে। তাঁকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেন আরেক বন্ধু। মুহূর্তের মধ্যেই গঙ্গার স্রোতে তলিয়ে যান দু’জনেই।
একমাত্র রক্ষা পাওয়া যুবকের চোখে বিভীষিকার ছবি
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান তৃতীয় যুবক। কোনওরকমে নিজেকে সামলে পিলার থেকে নেমে আসেন তিনি। দ্রুত খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দাদের ও পুলিশকে। তাঁর মুখেই ভয়াবহ সেই মুহূর্তের বিবরণ উঠে এসেছে— “একজন পড়ে যাওয়ার পর আমরা বুঝে উঠতে পারিনি কী করব। তখনই দ্বিতীয় জন ঝাঁপ দেয়। আমি ভয় পেয়ে যাই। নিজেকে কোনওরকমে সামলে ফোন করি। এখনও চোখের সামনে ভাসছে ওদের মুখ।”
পুলিশ-ডুবুরি তল্লাশি, স্থানীয়দের ক্ষোভ
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। ডাকা হয় ডুবুরি দলকে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সহায়তায় শুরু হয় নদীর তল্লাশি। তবে অনেক খোঁজ চালিয়েও এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ দুই যুবকের কোনও হদিস মেলেনি।
এদিকে, এই দুর্ঘটনা ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, “মা তারা ঘাটে পর্যাপ্ত কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। নেই কোনও সতর্কতামূলক বোর্ড বা ব্যারিকেড। ফলে পর্যটক বা দর্শনার্থীরা অজান্তেই বিপদে পড়েন।”
পরিবারে শোকের ছায়া, বন্ধুরা বাকরুদ্ধ
নিখোঁজ যুবকদের একজন, গোলাম রসূল (২৬), পেশায় প্রাইভেট সংস্থার কর্মী ছিলেন। অপরজন মহম্মদ ইরফান (২১) কলেজ পড়ুয়া। তাঁদের দুই পরিবারের খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিজনেরা। রবিবার দুপুরে হাসিমুখে যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁরা আর বাড়ি ফিরলেন না—এই ভাবনায় শোকে পাথর পরিবার।
প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন—এই ঘটনা কি এড়ানো যেত?
ঘটনার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ঘাটের ধারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকলে কি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত? প্রশাসনের তরফে যদিও জানানো হয়েছে, গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন এলাকাগুলিতে নজরদারি ও সতর্কতা বাড়ানো হবে। তবে কবে? তার উত্তর এখনও মেলেনি।
উল্লেখ্য, সেলফি এখন শুধু স্মৃতির নয়, বিপদেরও অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও বহু মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ছবি তুলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। রবীন্দ্রনগরের এই ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, গাফিলতির পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে।