রাজ্যজুড়ে ‘স্মার্ট মিটার’ বসানোয় উৎসাহী বিদ্যুৎ দপ্তর। আধুনিক প্রযুক্তি, রিয়েল টাইমে খরচের হিসাব, কন্ট্রোল রুম থেকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ—সবই দারুণ মনে হলেও বাস্তবে চিত্রটা যেন একেবারে ভিন্ন। অন্তত দত্তপুকুরের মানুষ সে কথাই বলছেন।
দত্তপুকুরের ময়না মোড়ে মঙ্গলবার রাতেই চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। স্মার্ট মিটার বসানোর পরে অত্যধিক বিদ্যুৎ বিলের অভিযোগে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিল বেড়েছে দ্বিগুণ! রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন মানুষ
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে যেখানে মাসে ৫০০-৬০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসত, এখন স্মার্ট মিটার বসানোর পর তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১২০০-১৫০০ টাকা। অথচ বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ একই রকম। তাঁদের দাবি, এই মিটার অস্বচ্ছ, ভুল তথ্য দিচ্ছে। কেউ কেউ তো বলছেন, “আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারই বাড়েনি, শুধু বিলটাই বেড়েছে! এটা কীভাবে সম্ভব?”
রাস্তা অবরোধ, পুলিশের হস্তক্ষেপে স্বস্তি
এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। ফলে জাতীয় সড়কে যান চলাচল একপ্রকার থমকে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দত্তপুকুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। পুলিশের সঙ্গে আলোচনা ও হস্তক্ষেপের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে, উঠিয়ে দেওয়া হয় অবরোধ।
স্মার্ট মিটার আসলে কী? সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি?
স্মার্ট মিটার এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যা বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য রিয়েল টাইমে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কন্ট্রোল রুমে পাঠায়। এতে থাকে সিম যুক্ত প্রযুক্তি, ফলে বিদ্যুৎ দপ্তর দূর থেকেই মিটার বন্ধ বা চালু করতে পারে।
বিশেষ করে প্রিপেড সিস্টেমে টাকা না থাকলে, সরাসরি কেটে দেওয়া হয় সংযোগ। এক্ষেত্রে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিটে চালিয়ে নেওয়ার সুবিধা থাকলেও, ব্যবহারকারীদের একাংশ বলছেন—তাতে বিশেষ সুবিধা কিছুই পাচ্ছেন না।
বিদ্যুৎ দপ্তরের বক্তব্য
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দাবি, স্মার্ট মিটার চালু হলে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ খরচ আরও সঠিকভাবে রেকর্ড হবে। অদক্ষতা ও অনিয়ম বন্ধ হবে। তবে তাঁরা স্বীকার করছেন—সচেতনতার অভাব থেকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
তাহলে কী মিটবে সমস্যা? নাকি আন্দোলন আরও ছড়াবে?
যদিও বিদ্যুৎ দপ্তরের যুক্তি রয়েছে, কিন্তু মানুষ যখন সরাসরি নিজেদের অসন্তোষ জানিয়ে রাস্তায় নামছেন, তখন বিষয়টা যে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার, তা বলাই বাহুল্য। শুধু দত্তপুকুর নয়, রাজ্যের আরও অনেক এলাকায় এরকম ক্ষোভ জমছে বলেও খবর।
সরকারি তরফে সচেতনতা ও স্বচ্ছতা না এলে এই ক্ষোভ যে আরও বড় আকার নিতে পারে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।