একেবারে সিনেমার মত দৃশ্য! রাতে ঘন ঘুমের শহরে আচমকা অভিযান খড়দহ থানার পুলিশের। সোদপুরের শান্ত পাড়ায় হঠাৎ চাঞ্চল্য—এক দুষ্কৃতীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হল বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র। ঘটনাটি যেন শহরতলির শান্ত পরিবেশে এক অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে দিল।
সূত্রের খবর, স্থানীয় বাসিন্দাদের গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোমবার গভীর রাতে সোদপুরে অভিযান চালায় খড়দহ থানার একটি বিশেষ দল। টার্গেট ছিল এক চিহ্নিত দুষ্কৃতী, নাম নাদিম শেখ। পুলিশের সন্দেহ ছিল, সে চুপিচুপি এলাকায় অস্ত্র মজুত করছে এবং বড় কোনও অপরাধমূলক কাজের ছক কষছে।
অস্ত্রের আস্তানা, ঘরে লুকনো আগুন
পুলিশ যখন নাদিম শেখের বাড়িতে হানা দেয়, তখন ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকির পর দরজা না খোলায়, পুলিশ শেষমেশ জোর করে ঢুকে পড়ে। তখনই একের পর এক চমক। ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়—
- ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র
- ১১ রাউন্ড কার্তুজ
- ১টি কুঠার
- ১টি ভোজালি
- ১টি ধারালো চপার
এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র দেখে পুলিশের চোখ কপালে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও হতবাক। এক পড়শি জানান, “নাদিম চুপচাপ মানুষ, কখনো এমন কিছু আন্দাজ করতে পারিনি।” যদিও পুলিশ বলছে, নাদিম শেখ ইতিমধ্যেই একাধিক মামলায় জড়িত ছিল এবং দীর্ঘদিন ধরেই তাকে নজরে রাখা হয়েছিল।
কেন এত অস্ত্র? বড় কোনও ষড়যন্ত্র?
নাদিম শেখ এত বিপুল অস্ত্র কেন মজুত করছিল, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, স্থানীয় কোনও গ্যাংয়ের সঙ্গে তার যোগ থাকতে পারে, কিংবা বড় কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তৈরি হচ্ছিল সে।
এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, “ঘটনাটি খুবই গুরুতর। আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস কোথা থেকে, কাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা তদন্তে নেমেছি। প্রয়োজনে অন্য জেলাতেও ছড়াবে তদন্তের পরিধি।”
বাড়ছে দুষ্কৃতীর দাপট, আতঙ্কে এলাকাবাসী
এই ঘটনায় সোদপুর ও আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়েছে উদ্বেগ। একের পর এক এলাকায় এমন অস্ত্র উদ্ধারে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। তাদের বক্তব্য, “এত অস্ত্র যদি একা একজনের ঘরে থাকে, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?” পুলিশ আশ্বস্ত করছে, পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এলাকায় নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের কথাও ভাবা হচ্ছে।
ধৃতের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা
নাদিম শেখকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে, যার মধ্যে অস্ত্র আইনের কঠোর ধারা রয়েছে। তাকে জেরা করে আরও তথ্য বের করার চেষ্টা চলছে। জানা গিয়েছে, খুব শিগগিরই তাকে আদালতে তোলা হবে এবং রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবে পুলিশ, যাতে অস্ত্রের জোগানদার ও যোগাযোগের উৎস জানা সম্ভব হয়।
প্রসঙ্গত, সোদপুরের মতো শান্তিপূর্ণ শহরতলিতে এমন ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, অপরাধের শিকড় অনেক গভীরে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের সঠিক ও তৎপর পদক্ষেপে বড় বিপদ এড়ানো গেলেও, এখন সময় আরও কড়া নজরদারির। জনগণের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—এভাবে যদি অস্ত্র মজুত হয়, তাহলে শহরের নিরাপত্তা কোথায়?