OBC : মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠল রাজ্য রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন—“ধর্মের ভিত্তিতে নয়, তথ্যভিত্তিক সমীক্ষা করেই সংরক্ষণ তালিকা তৈরি হয়েছে।” তাঁর এই বক্তব্যের পরেই বিধানসভা কক্ষ থেকে হইচই করতে করতে বেরিয়ে এলেন বিজেপি বিধায়করা।
কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওবিসি তালিকা তৈরির জন্য রাজ্য সরকার ‘বেঞ্চমার্ক সমীক্ষা’ চালিয়েছে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তালিকা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, “বাম আমলে ওবিসি সংরক্ষণ শুরু হলেও কোনও নির্দিষ্ট সমীক্ষা ছিল না। এখনকার তালিকা পুরোপুরি তথ্যনির্ভর এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণিকে গুরুত্ব দিয়েই সংরক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”
সংখ্যায় কত সম্প্রদায় তালিকাভুক্ত?
মুখ্যমন্ত্রীর রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ১৪০টি সম্প্রদায় ওবিসি তালিকাভুক্ত—
- ‘A’ ক্যাটাগরিতে: ৪৯টি সম্প্রদায়
- ‘B’ ক্যাটাগরিতে: ৯১টি সম্প্রদায়
এছাড়াও, আরও ৫০টি সম্প্রদায়ের উপর সমীক্ষা চলছে।
“ধর্ম নয়, আর্থিক দুরবস্থা!”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ বলছে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি মিথ্যা। এই তালিকা ধর্মনিরপেক্ষ। শুধুমাত্র আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
বিজেপির পাল্টা আক্রমণ
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হতেই বিধানসভা কক্ষে উত্তেজনা চরমে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ—“এই সরকার সংখ্যালঘু তোষণ করছে। হাই কোর্টে এই মামলাটি বিচারাধীন, সুপ্রিম কোর্টেও ১৫ জুলাই শুনানি। তাও আজ মুখ্যমন্ত্রী নিজে বক্তব্য দিয়ে স্পিকার অধিবেশন স্থগিত করে দিলেন! এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত।”
বিজেপি বিধায়কদের অভিযোগ, শুভেন্দুকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই অধিবেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “এ লড়াই হিন্দুদের অধিকারের লড়াই, আমরা ছাড়ব না।”
আদালতের রায় এবং বিতর্কের শিকড়
২০২৪ সালের মে মাসে কলকাতা হাই কোর্ট রাজ্যের ২০১০ সালের পর থেকে ইস্যু হওয়া সব ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দেয়। এর ফলে প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট অকেজো হয়ে যায়। রাজ্য সরকার ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়।
এই সংক্রান্ত পরবর্তী শুনানি হবে ১৫ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টে। এই সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে রাজ্যের ওবিসি সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ।
উল্লেখ্য, একদিকে রাজ্য সরকারের তথ্যভিত্তিক দাবি, অন্যদিকে বিরোধীদের ধর্মীয় মেরুকরণের অভিযোগ—এই দ্বন্দ্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রাজ্যের লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ। প্রশ্ন একটাই—ধর্ম নয়, তবে কি এই সংরক্ষণ আদৌ স্থায়ী হবে?