সুবিধা যেমন, সমস্যা তেমনই। একদিকে শহর ও শহরতলির মানুষের কাছে ‘লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি’-র অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে টোটো। অন্যদিকে, এই তিন চাকার যান নিয়ন্ত্রণহীনভাবে রাস্তায় নেমে পড়ায় যানজটে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। তাই এবার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য সরকার।
টোটো চলবে কিউআর কোড ছাড়া নয়
পরিবহণ দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে টোটো চলবে শুধুমাত্র কিউআর (QR) কোডযুক্ত স্টিকার লাগানো অবস্থায়। অর্থাৎ, কোনও টোটোর গায়ে যদি ওই নির্দিষ্ট কিউআর কোড না থাকে, তাহলে সেটিকে বেআইনি বলে বিবেচনা করা হবে। এই কিউআর কোড স্ক্যান করলেই পাওয়া যাবে টোটোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর, মালিকের তথ্য, নির্ধারিত রুট সংক্রান্ত বিবরণ—সব কিছুই থাকবে ডিজিটাল নথিভুক্ত।
কেন এই পদক্ষেপ
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহরে, বিশেষত কল্যাণী, বর্ধমান, কোচবিহার—এমন অনেক শহরেই স্থানীয় বাসিন্দা ও অটোচালকদের অভিযোগ, রাস্তায় বেপরোয়া টোটো চলাচল যানজট বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি, অনুমতি ছাড়াই বহু টোটো রাস্তায় চলাচল করছে, যার ফলে নিয়মিত রুটে চলা অটোর আয়েও প্রভাব পড়ছে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা কিউআর কোড চালুর উদ্যোগ নিচ্ছি। কেবল লাইসেন্সপ্রাপ্ত টোটোচালকরাই এই স্টিকার পাবেন।”
RTO-র সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে তথ্য
এই QR সিস্টেমটি সরাসরি সংযুক্ত থাকবে এলাকার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের (RTO) সঙ্গে। ফলে, রিয়েল টাইমে নজরদারি করা যাবে কোন টোটো বৈধ আর কোনটি নয়। এতে শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা নয়, যাত্রী নিরাপত্তার দিকটাও নিশ্চিত করা যাবে বলেই মনে করছে দফতর।
চালকদের কর্মসংস্থান ও যাত্রী নিরাপত্তা—দু’দিকেই নজর
সরকারের এই পদক্ষেপের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, বৈধ টোটোচালকদের কর্মসংস্থানে সুরক্ষা আনা এবং যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। বিনা লাইসেন্সে বা ভুল রুটে চলা টোটোর কারণে যেমন সমস্যা বাড়ে, তেমনই আসল চালকরাও আয় হারাচ্ছেন। তাই এই নিয়মে প্রতিটি টোটোকে চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে রাখা সহজ হবে।
স্টিকার তৈরি প্রক্রিয়া শুরু
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কিউআর কোডযুক্ত স্টিকার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই প্রতিটি বৈধ টোটোচালকের হাতে এই স্টিকার তুলে দেওয়া হবে। স্টিকারটি টোটোর দৃশ্যমান স্থানে লাগানো বাধ্যতামূলক হবে, যাতে যাত্রীরা নিজেরাও সহজে তা স্ক্যান করে যাচাই করতে পারেন।
জনস্বার্থে কঠোরতা জরুরি, মত পরিবহণ দফতরের
শহর ও গ্রাম—উভয় জায়গাতেই টোটোর চাহিদা প্রবল। কিন্তু লাইসেন্স ছাড়া বেপরোয়া ভাবে চলাচল করলে তা জনজীবনে বিশৃঙ্খলা আনে। পরিবহণ দফতরের মতে, এই সমস্যা রুখতেই QR স্টিকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
টোটো আজ শহরের প্রয়োজনীয় যান। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণহীন হলে, সুবিধার বদলে সমস্যা তৈরি করে। QR কোড চালুর মাধ্যমে এবার সেই বিশৃঙ্খলাকেই নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। এখন দেখার, এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হয় মাটির মানুষের জীবনে।