খরচ কম, সময়ও বেশি নয়। অথচ ফলন ভাল হলে রোজগার হতে পারে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত! এমনই এক সম্ভাবনাময় চাষ হচ্ছে আজ বাংলার বহু প্রান্তে—ঝিঙে চাষ। কম খরচে চাষযোগ্য এই সবজি এখন গ্রামীণ অর্থনীতির নতুন দিশা দেখাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য পরিচর্যা আর উপযুক্ত মাটিই পারে এই ফসলকে লাভের চূড়ায় পৌঁছে দিতে।
লাভের অঙ্ক শুনলে চোখ কপালে উঠবে!
ফারুখাবাদের এক কৃষকের উদাহরণে জানা যাচ্ছে, মাত্র ১ বিঘা জমি থেকে ঝিঙে চাষ করে তিনি দুই মাসে প্রায় ₹৭০,০০০ টাকা আয় করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ₹৬০–৭০ টাকায়। উৎপাদনের খরচ কম হলেও চাহিদা বেশি হওয়ায় লাভ মার্জিন যথেষ্ট।
আবহাওয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
ঝিঙে একটি উষ্ণপ্রিয় লতানো ফসল। ভালো ফলনের জন্য দরকার গরম ও আর্দ্র পরিবেশ। এর আদর্শ তাপমাত্রা ২৫°–৩৭°C, এবং মাটির pH মান ৬.৫–৭.৫ হলে ফসল ভালো হয়। দক্ষিণবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল ও কিছু মধ্যভারতীয় জেলায় এই পরিবেশ সহজেই পাওয়া যায়।
চাষের সময়সীমা ও পদ্ধতি
বীজ বপনের এক মাসের মধ্যেই গাছে ফুল আসে এবং ফল ধরতে শুরু করে। মাত্র ৬০–৭০ দিনের মধ্যে পুরো জমি থেকে ফলন ওঠে। এর ফলে কৃষকরা একই বছরে দুই বা তিন বার ঝিঙে চাষ করতে পারেন।
চাষের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক হল:
-
জৈব সার ও গোবর সার প্রয়োগ
-
সঠিক সেচ ব্যবস্থা
-
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
-
পরাগায়নের জন্য মৌমাছির উপস্থিতি বৃদ্ধি
যদি গাছ ঠিকভাবে বেড়ে ওঠে এবং সঠিক সময়ে সেচ ও পরাগায়ন নিশ্চিত করা যায়, তাহলে প্রতি গাছ থেকে ২০–২৫টি ঝিঙে পাওয়া সম্ভব।
উপযুক্ত জাতের বীজ মানে ফলনে গুণগত পরিবর্তন
বর্তমানে বাজারে নানা উন্নত জাতের ঝিঙের বীজ পাওয়া যাচ্ছে। HYV (High Yield Variety) ঝিঙে অনেক বেশি ফলন দেয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। কৃষি দফতর থেকে পরামর্শ নিয়ে সঠিক বীজ বেছে নেওয়াই লাভজনক।
সরকারি সাহায্য ও বিকল্প বাজার
রাজ্য কৃষি দফতর ও কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তরফে বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ ও বীজ ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখা হয়। ঝিঙে চাষে যারা নতুন, তাঁদের জন্য রয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিসের সহায়তা। স্থানীয় হাট ও কৃষক উৎপাদক সংগঠনের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রি করলে মধ্যস্বত্বভোগীর সমস্যা এড়ানো সম্ভব, ফলে কৃষক নিজেই পুরো লাভের অংশ পান। কম সময় ও কম পুঁজিতে আয়বর্ধক ফসলের সন্ধান করছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য ঝিঙে চাষ হতে পারে এক নতুন সম্ভাবনার দিশা। যেকোনো কৃষক যাঁর জমি সীমিত কিন্তু ইচ্ছা প্রবল, এই ফসল তাঁর ভাগ্য বদলাতে পারে কয়েক সপ্তাহেই।