হঠাৎ করেই দেখলেন আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারছেন না? অথচ আপনি নিয়ম মতো টাকা জমা রেখেছেন। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত সমস্যায় আজকাল অনেকেই পড়ছেন, যেখানে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আচমকা ‘ফ্রিজ’ বা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়া গেলেও, কোনও টাকা তোলা বা অন্য কোথাও পাঠানো সম্ভব হয় না। এর পিছনে মূল কারণ সাইবার সেল থেকে আসা ব্যঙ্কের নোটিস।
কেন অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়?
অনেক সময় দেখা যায়, আপনার নিজের অ্যাকাউন্টে কোনও সন্দেহজনক লেনদেন না থাকলেও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এমন ঘটনাও ঘটছে যেখানে আপনি হয়তো এমন কোনও ব্যক্তির থেকে টাকা নিয়েছেন, যার অ্যাকাউন্টটি সাইবার সেলের নজরে রয়েছে। যদি সেই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট কোনও জালিয়াতির কারণে ফ্রিজ করা হয়, তবে তার সঙ্গে লেনদেন করার জন্য আপনার অ্যাকাউন্টও সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, অন্যের ভুলের কারণেও আপনাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো সন্দেহজনক লেনদেনের ধারাটিকে আটকানো এবং তদন্তে সাহায্য করা।
এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়?
বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে এবং সমস্যা হলে তার মোকাবিলা করার জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন।
১. দুটি ভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন: দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য দুটি আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একটি অ্যাকাউন্ট প্রধান সঞ্চয়ের জন্য এবং অন্যটি দৈনন্দিন ছোটখাটো লেনদেন বা UPI পেমেন্টের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। দুটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে খুব বেশি লেনদেন না করাই ভালো। এর ফলে যদি একটি অ্যাকাউন্ট কোনও কারণে ফ্রিজ হয়েও যায়, আপনার রোজকার জীবনযাত্রা বা জরুরি প্রয়োজন আটকাবে না।
২. প্রমাণ সংগ্রহ করুন: যদি আপনার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যায়, তবে আতঙ্কিত হবেন না। প্রথমেই আপনার সমস্ত লেনদেনের প্রমাণ, যেমন স্টেটমেন্ট, রসিদ ইত্যাদি সংগ্রহ করুন। আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার লেনদেনটি সম্পূর্ণ বৈধ এবং কোনও বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নয়।
৩. সাইবার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ: অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু করার জন্য সাইবার সেলের কাছে আবেদন জানাতে হবে। এই আবেদনটি অনলাইন পোর্টাল বা ইমেলের মাধ্যমে করাই শ্রেয়। অনেক ক্ষেত্রে, সাইবার সেলের অফিস অনেক দূরে অবস্থিত হতে পারে। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে হাজিরা দিলে অকারণে হয়রানির শিকার হওয়ার বা গ্রেফতারির ভয় থাকতে পারে। তাই ডিজিটাল মাধ্যমে যোগাযোগ করাই নিরাপদ।
৪. আইনি সহায়তা নিন: আপনার আবেদনের পরেও যদি ব্যাঙ্ক বা সাইবার সেল কোনও সদুত্তর না দেয় বা অ্যাকাউন্ট চালু না করে, তবে আপনি আইনি পথে হাঁটতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (Writ Petition) দাখিল করে অ্যাকাউন্টটি পুনরায় চালু করার জন্য আবেদন জানানো যেতে পারে। আইন অনুযায়ী, যথাযথ কারণ ছাড়া কোনও নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্রিজ করে রাখা যায় না।
সচেতন থাকলে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই ধরনের অপ্রত্যাশিত সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।