ক্রিকেট মাঠের গ্ল্যামার পেরিয়ে এবার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগে জড়ালেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের জাতীয় দলের এক সক্রিয় ক্রিকেটার। গায়ানাতে মোট ১১ জন নারী, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন কিশোরী, ওই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন।
পার্টির রাতেই শুরু বিতর্ক
ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের ৩ মার্চ। গায়ানার নিউ আমস্টারডাম, বারবিস এলাকার একটি পার্টিতে এক কিশোরী তরুণীকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, অভিযুক্ত ক্রিকেটার ওই কিশোরীর প্যান্ট ছিঁড়ে তাঁকে জোরপূর্বক নিগ্রহ করেন। এই ঘটনার পর একে একে আরও ১০ জন মহিলা একই রকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সামনে আসেন। সকলেই ওই এক ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন।
তদন্ত চলছে, নেই কোনও গ্রেফতার
গায়ানা পুলিশ এই ঘটনাগুলির তদন্ত শুরু করেছে। তবে এতজন অভিযোগকারীর বিবৃতি সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত ওই ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কোনও গ্রেফতার বা সরাসরি অভিযোগপত্র পেশ করা হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। অভিযোগকারীদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেছেন, পুলিশি তদন্তকে চাপের মুখে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁদের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি যেহেতু জাতীয় দলের সদস্য, তাই তাঁকে বাঁচাতে একাধিক প্রভাবশালী মহল সক্রিয় হয়েছে।
বোর্ড জানে না, নাকি জানার ভান?
এই বিষয়ে যখন ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ (CWI)-এর প্রেসিডেন্ট কিশোর শ্যালোর কাছে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হয়, তিনি বলেন, তাঁরা এই বিষয়ে অবগত নন এবং তাই কোনও মন্তব্যও করতে পারছেন না। এই বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার এত গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত, অথচ বোর্ড কিছুই জানে না—এটা কীভাবে সম্ভব?
অস্ট্রেলিয়া সফরের মাঝেই চাপ বাড়ছে দলেও
এই মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সিরিজ খেলছে। দলের এক সদস্যের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠায় ক্রিকেটারদের মনোবল এবং দলের ভাবমূর্তি—দুইই চাপে পড়েছে। যদিও অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করা হয়নি সরকারি স্তরে, তবু ক্রীড়ামহলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিচার কি আদৌ হবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অভিযোগে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হয়। তবে যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ এবং আজীবন ব্যান—উভয়ই হতে পারে। অন্যদিকে, যদি প্রমাণের অভাবে অভিযোগ খারিজ হয়, তবুও তাঁর কেরিয়ারে স্থায়ী কালো দাগ পড়ে যাবে, তা নিশ্চিত। ক্রিকেট শুধু খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়, তার বাইরেও একজন খেলোয়াড়ের দায়িত্ব থাকে সমাজের প্রতি। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে, শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, গোটা দলের, গোটা দেশের, গোটা খেলার সম্মান প্রশ্নের মুখে পড়ে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সত্য উন্মোচিত হওয়া দরকার—যাতে নির্দোষ বাঁচেন এবং অপরাধীর সাজা হয়।