অবশেষে উড়ল সবুজ স্বপ্নের ডানা! দূষণমুক্ত আকাশপথের সন্ধানে ভারত এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। দেশের প্রথম সারির তেল উৎপাদনকারী সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের পানিপথ শোধনাগার এখন থেকে রান্নায় ব্যবহৃত তেল থেকে তৈরি করবে বিমান চলাচলের উপযোগী জ্বালানি, যা সাস্টেইনেবল এভিয়েশন ফুয়েল (SAF) নামে পরিচিত। এই শোধনাগারটি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে, যা ভারতের বিমান শিল্পকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল।
বর্জ্য থেকে সবুজ জ্বালানির পথ
পানিপথ শোধনাগারের এই উদ্যোগটি শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, দেশের জ্বালানি সুরক্ষাতেও একটি বড় পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কার্বন অফসেটিং অ্যান্ড রিডাকশন স্কিম ফর ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন (CORSIA)-এর আওতায় ইন্টারন্যাশনাল সাস্টেইনেবিলিটি অ্যান্ড কার্বন সার্টিফিকেশন (ISCC) অর্জন করেছে এই শোধনাগার। এর ফলে, ইন্ডিয়ান অয়েল নিশ্চিত করতে পারবে যে তাদের উৎপাদিত SAF সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং বিমান চলাচলের জন্য নিরাপদ। এটি একটি বিরাট সাফল্য, যা প্রমাণ করে যে বর্জ্য পদার্থ থেকেও উচ্চ মানের জ্বালানি তৈরি করা সম্ভব।
উৎপাদন এবং লক্ষ্যমাত্রা
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন এক উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতি বছর ৩৫,০০০ টন SAF উৎপাদন করা হবে। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠান থেকে সংগৃহীত বর্জ্য রান্নার তেল। এর ফলে একদিকে যেমন বর্জ্য পদার্থের সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্ভব হবে, তেমনই কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রেও বড়সড় ভূমিকা রাখা যাবে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে গাঁটছড়া
এই সবুজ জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইন্ডিয়ান অয়েল এবং এয়ার ইন্ডিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি বা মেমোরান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে, এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বিমান বহরে এই পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করতে পারবে, যা তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে। এয়ার ইন্ডিয়ার এই উদ্যোগ ভারতের অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা যায়।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য
ভারতের লক্ষ্য হল ২০২৭ সালের মধ্যে বিমান চলাচলের জ্বালানির অন্তত ১% SAF ব্যবহার নিশ্চিত করা। পানিপথ শোধনাগারের এই উদ্যোগ সেই লক্ষ্য পূরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিমান চলাচল শিল্প বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণের অন্যতম প্রধান উৎস। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে SAF-এর ব্যবহার সেই নিঃসরণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। এর মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের অঙ্গীকার আরও একবার প্রমাণ করল। এই নতুন প্রযুক্তি এবং উদ্যোগের ফলে ভারতের বিমান শিল্প শুধু অর্থনৈতিকভাবেই নয়, পরিবেশগতভাবেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।