Los Angeles : গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত শহর লস অ্যাঞ্জেলেস। অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে জনরোষ এখন তুঙ্গে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন আমেরিকার অভিবাসন এবং শুল্ক দফতর (ICE)-এর একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। ফলস্বরূপ রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ, মিছিলে-স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে শহরের রাস্তাঘাট। এই জনরোষ সামাল দিতে গিয়ে প্রশাসন অবশেষে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। শহরের একাধিক স্পর্শকাতর অঞ্চলে জারি করা হয়েছে রাত্রিকালীন কার্ফু।
কার্ফু জারি রাত ৮টা থেকে, চলবে ভোর অবধি
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের বিভিন্ন অংশে প্রতিদিন সন্ধ্যে ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কার্ফু বলবৎ থাকবে। কার্ফুর আওতায় থাকাকালীন কেউ রাস্তায় নামলে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবা এবং প্রয়োজনীয় কাজে নিয়োজিত মানুষজনই এর আওতার বাইরে থাকবেন। এতটা কঠোর পদক্ষেপের কারণ হিসেবে পুলিশের দাবি, শহরের পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছিল কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী, যা অশান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
অভিবাসন নীতিতে ক্ষোভ, লক্ষ্য ট্রাম্প প্রশাসন
বর্তমান উত্তেজনার মূল উৎস ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি। আমেরিকায় বসবাসকারী বহু অনিবন্ধিত অভিবাসী সম্প্রদায়ের উপর সম্প্রতি কড়া নজরদারি শুরু করেছে ICE। অভিযোগ উঠেছে, কোনওরকম সতর্কতা ছাড়াই অনেককে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে পরিবার। এইরকমই এক ঘটনার প্রতিবাদেই প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু হয়ে যায় আন্দোলন। পরে তা রাস্তায় নেমে বৃহৎ জনবিক্ষোভে পরিণত হয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলির প্রতিবাদ
এই অবস্থায় শুধু সাধারণ নাগরিকই নন, একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত সংগঠনও মাঠে নেমেছে। তাদের অভিযোগ, বর্তমান প্রশাসন সংবিধান লঙ্ঘন করছে। অনেক ক্ষেত্রেই গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ বা ন্যায্য শুনানির অধিকারও দেওয়া হচ্ছে না। মানবাধিকার কর্মী মারিয়া গুটেরেজ বলেন, “এই মুহূর্তে লস অ্যাঞ্জেলেসে যা ঘটছে, তা গণতান্ত্রিক দেশের পক্ষে এক লজ্জাজনক অধ্যায়।”
পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হয়েছে, তারা শহরের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতেই কার্ফুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তবে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। পুলিশের বিরুদ্ধে অহেতুক বলপ্রয়োগ, নির্বিচার গ্রেফতার এবং বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ এনেছে আন্দোলনকারীরা।
লস অ্যাঞ্জেলেসের এই পরিস্থিতি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অভিবাসন ইস্যু কতটা স্পর্শকাতর। আপাতত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্ফু জারির সিদ্ধান্ত কি সত্যিই সমস্যার স্থায়ী সমাধান, নাকি তা আরও বাড়াবে জনরোষ—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।