চার বছর ধরে দিব্যি ভারতের মাটিতে মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষক সেজে বসবাস করছিলেন এক বাংলাদেশি যুবক। নকল কাগজপত্রে পেয়েছিলেন আধার, প্যান, এমনকি তুলছিলেন রাজ্য সরকারের ইমাম ভাতা! অবশেষে উত্তরবঙ্গের সীমান্তে ঘোরাঘুরি করার সময় বিএসএফ-এর হাতে ধরা পড়ল আসল পরিচয়। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে।
বিএসএফ-এর নজরে পড়েই ধরা পড়ল ভুয়ো পরিচয়ের ইমাম
ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। ফুলকাডাবরি এলাকার অর্জুন চৌকি সংলগ্ন বাগডোকরা সীমান্তে টহল দিচ্ছিল বিএসএফ-এর ৬ নম্বর ব্যাটালিয়ন। তখনই জওয়ানদের সন্দেহ হয় এক ব্যক্তিকে দেখে। আচরণ ও গতিবিধিতে অসঙ্গতি দেখে তাঁকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন, তিনি আদতে বাংলাদেশি নাগরিক। নাম মহম্মদ সেলিম আনসারি, বয়স ৩৩। বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানায়। চার বছর আগে বেআইনিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন। এরপর মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন।
ভুয়ো পরিচয়ে মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষক!
ভারতে ঢোকার পরেই সেলিম ভুয়ো নাম ও ঠিকানায় আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বানিয়ে নেন। তারপর বেলডাঙার মকরামপুর দক্ষিণপাড়া মসজিদের ইমাম হিসেবে কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি, স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতেও শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যান।
শুধু এখানেই শেষ নয়—সরকারি ইমাম ভাতা পাওয়ার জন্যও তিনি ভুয়ো কাগজপত্র ব্যবহার করেন। নিজের নাম ব্যবহার না করে স্থানীয় এক ব্যক্তির নাম দিয়ে ভাতা তোলার আবেদন করেন। ভাতা মিললে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ভাগ করে নিতেন টাকা। এইভাবে দীর্ঘ চার বছর ধরে রাজ্যের ধর্মীয় ও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী!
প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে বড় প্রশ্ন
এই ঘটনা সামনে আসতেই প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে একজন বিদেশি নাগরিক এতদিন ধরে একাধিক জাল নথি তৈরি করে সরকারি ভাতা পর্যন্ত পেয়ে গেলেন? কে বা কারা তাঁকে এইসব করতে সাহায্য করেছিল, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিএসএফ-এর উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি মোহিত ত্যাগী জানিয়েছেন, ‘ধৃত সেলিমকে কুচলিবাড়ি থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং দুটি ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে—যারা তাঁকে সীমান্ত পার করে আনার কাজে সহায়তা করেছিল বলে সন্দেহ।’
জেরায় স্বীকারোক্তি, আদালতে তোলা হবে সেলিমকে
জেরার মুখে সেলিম জানিয়েছেন, “আমি চার বছর আগে এসেছি। ইমাম ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। পরিচয়পত্র বানিয়েছি। কিছু কাগজ তৈরি হয়নি এখনও। এবার বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে ফিরছিলাম, তখনই ধরা পড়ি।” পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশ ও জাল নথিপত্র তৈরি করার অভিযোগে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁকে আদালতে তোলা হবে।