সিম পোর্ট করার নামে ভোটার ও আধার কার্ড সংগ্রহ করে বায়োমেট্রিক নিয়ে তৈরি করা হত নতুন সিম কার্ড। আর সেই কার্ড যেত সোজা সাইবার অপরাধীদের হাতে। এই অভিনব কৌশলে চালানো হত বড়সড় প্রতারণা। শেষমেশ গ্রেফতার হল এই চক্রের তিন সদস্য। ঘটনা বারাসতের, তবে ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশের বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকায়।
কাদের গ্রেফতার করল পুলিশ?
বারাসত সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে তিন অভিযুক্তকে—
-
সমিরুল হক (২৪)
-
বকুল বিশ্বাস (২৬)
-
সইফুল গাজি (২৮)
তাদের কাছ থেকে ২২টি সিম কার্ড ও ৩টি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ জানায়, মূলত বারাসত, আমডাঙা ও অশোকনগর অঞ্চলে সক্রিয় ছিল চক্রটি।
প্রতারণার ছক কীভাবে চলত?
১. সড়কে ছাতা খাটিয়ে বা টোটো নিয়ে ঘুরে বেড়াত অভিযুক্তরা।
২. দাবি করত, অন্য অপারেটরে সিম পোর্ট করলে মিলবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিশেষ অফার ও বেশি ইন্টারনেট ডেটা।
৩. তারপর গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া হত আধার, ভোটার কার্ড ও বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ)।
৪. এরপর গ্রাহকদের জানানো হত, ছবির সঙ্গে মিল না থাকায় সিম পোর্ট করা যাচ্ছে না।
৫. অথচ এইসব নথি ব্যবহার করে তোলা হত নতুন সিম কার্ড—যা যেত সাইবার অপরাধীদের হাতে।
তদন্তে পুলিশের অগ্রগতি কী?
এই ঘটনার সূত্রপাত হয় সইফুল গাজিকে ধরার পর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই বাকি দুই অভিযুক্তের নাম জানতে পারে পুলিশ। এরপর অশোকনগর থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
বারাসতের এসডিপিও বিদ্যাগর অজিঙ্কা অনন্ত জানিয়েছেন— “ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার”-এর তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে জেরা করে দেখা হচ্ছে, এই চক্রে আর কেউ জড়িত রয়েছে কি না।
সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রতারিত হচ্ছেন?
এই ধরনের প্রতারণা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার নয়, এর মাধ্যমে
-
অনলাইনে জালিয়াতি
-
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক
-
ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে লোন তোলা
জাতীয় গুরুতর অপরাধে ব্যবহার করা হয় এসব সিম কার্ড।
পুলিশের পরামর্শ
-
রাস্তার ধারে সিম পোর্টের প্রলোভনে পা না দিতে বলা হয়েছে।
-
বায়োমেট্রিক কেবলমাত্র সরকারি বা অনুমোদিত দোকানেই দেওয়া উচিত।
-
অচেনা লোকের কাছে কোনও পরিচয়পত্র জমা না দিতে সতর্ক করেছেন তদন্তকারীরা।
বারাসতের এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সাইবার প্রতারণা কতটা দ্রুত ও অভিনব পন্থায় ছড়িয়ে পড়ছে। আধার ও বায়োমেট্রিকের মতো স্পর্শকাতর তথ্যের অপব্যবহার রুখতে পুলিশের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সতর্ক হওয়া এখন সময়ের দাবি।