যুদ্ধ, অনাহার, মৃত্যু আর ধ্বংসস্তূপের মাঝে হঠাৎই যেন আবেগের বিস্ফোরণ। ত্রাণ এসে পৌঁছতেই গাজার মাটিতে মুখর হল ধ্বনি— “আই লাভ ইউ ট্রাম্প!” সেই আবেগঘন মুহূর্তের ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট নিজে এই ভিডিও শেয়ার করেছেন ‘এক্স হ্যান্ডেল’-এ। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়ার ঢল।
মার্কিন সহায়তা পৌঁছাল গাজায়
গত কয়েক মাস ধরেই গাজায় ত্রাণ পৌঁছনোর দাবি উঠছিল আন্তর্জাতিক মহলে। রাষ্ট্রসংঘও সম্প্রতি সতর্ক করেছিল, “গাজা দুর্ভিক্ষের মুখে দাঁড়িয়ে আছে”। সেই আবহেই অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন GHF (Global Humanitarian Front) ত্রাণ পাঠায় গাজায়। এই ত্রাণ আসার খবরে বহুদিন পর কিছুটা স্বস্তি পেলেন যুদ্ধবিধ্বস্ত প্যালেস্টিনীয়রা।
‘আই লাভ ইউ ট্রাম্প’ কেন?
তবে ত্রাণ পৌঁছানো মাত্রই প্যালেস্টিনীয় জনগণের মুখে যে ধ্বনি শোনা গেল— “আই লাভ ইউ ট্রাম্প”, “আই লাভ ইউ ডোনাল্ড”—তা আন্তর্জাতিক স্তরে এক অন্য মাত্রা তৈরি করেছে। এমন এক সময়, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নন, বরং নির্বাচনের আগে প্রচারে ব্যস্ত। বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাকে সামনে রেখে ট্রাম্প তাঁর “নম্র মুখোশ” ফের তুলে ধরার চেষ্টা করবেন আগামী নির্বাচনে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, অনেক শিশু ও বৃদ্ধও হাতে মার্কিন পতাকা নাড়িয়ে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন ত্রাণ পৌঁছনোর জন্য।
হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা
এই ঘটনার আগের দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু-কে উদ্দেশ করে এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন— “চুক্তি করুন, পণবন্দিদের ফেরত আনুন।” এই বার্তাকে ইতিবাচক বলেই উল্লেখ করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ইরানে যুদ্ধবিরতির জেরে এখন গাজার পরিস্থিতিতে কিছুটা আলো দেখা যাচ্ছে। এমনকি হামাসের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার কথাও উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
এই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহল থেকে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। একদিকে কেউ একে বলছেন “ত্রাণের রাজনীতি”, কেউবা বলছেন “মানবিকতা ও মার্কিন ছত্রছায়ার প্রতি কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ”। মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এটি নিছক ত্রাণ পাওয়ার আনন্দ নয়, বরং আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ সাহায্যের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।” তবে অনেকেই এটিকে ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ বলে সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে আমেরিকার বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, এটা ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের অঙ্গমাত্র।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার প্রতিদিনের জীবন শুধুই বেঁচে থাকার লড়াই। তার মাঝেও একটা ছোট্ট খাদ্যপ্যাকেট, একটা কম্বল, আর একটা মানবিক হাত—তা হয়তো ওই প্যালেস্টিনীয়দের মুখে এনে দিল সেই একটুখানি হাসি। আর তারই বহিঃপ্রকাশ আজ বিশ্বের সামনে— “আই লাভ ইউ ট্রাম্প!”