৬৫ বছরের পুরনো ‘সিন্ধু জলচুক্তি’ এখন দুই দেশের মধ্যে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু। কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার জবাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি বাতিল করে দিয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হুঁশিয়ারি, “ওরা শুকিয়ে মরলেও সিন্ধু জলচুক্তি চালু করব না।” তার পালটা জবাবে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি জানিয়ে দিয়েছেন, “জলচুক্তি পুনর্বহাল না হলে পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা করবে।”
প্রচারে নামছে মোদি সরকার, বুঝিয়ে বলবে ‘কেন’ এই সিদ্ধান্ত?
সরকারি সূত্র বলছে, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কূটনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব সাধারণ নাগরিকদের বুঝিয়ে বলতেই এবার মাঠে নামছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। মূলত উত্তর ভারতের চার রাজ্য — জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থান—এর বাসিন্দাদের লক্ষ্য করেই এই প্রচার।
তাঁদের বোঝানো হবে:
-
ভারতের কতখানি জল অন্যায়ভাবে পাচ্ছিল না,
-
পাকিস্তান কিভাবে ওই জল নিয়ে নিজের ভূখণ্ডের বাইরে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাত,
-
আর এখন সেই জল নিজেদের ব্যবহারে ফিরিয়ে আনা কতটা জরুরি।
নতুন জলকৌশল: ১৩টি খালের জলস্রোত বাড়বে!
এই চুক্তি বাতিলের ফলে কেন্দ্র নতুন এক দীর্ঘমেয়াদি জল ব্যবস্থা পরিকল্পনা করেছে। সরকারের লক্ষ্য, সিন্ধু নদীর জল এখন ভারতীয় কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা।
পরিকল্পনায় রয়েছে:
-
চন্দ্রভাগা নদীর সঙ্গে ১৬০ কিমি নতুন খাল সংযোগ,
-
রাজস্থানের গঙ্গা খালের সঙ্গে সিন্ধুর সংযোগ,
-
পাঞ্জাব-কাশ্মীর সীমান্তে একাধিক নতুন জলাধার গড়ে তোলা।
কেন্দ্র মনে করছে, চুক্তি স্থগিত হওয়ায় ভারতের হাতে ‘উদ্বৃত্ত জল’ ফিরে আসবে, যা দিয়ে উত্তর ভারতের কৃষি অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে।
পাকিস্তানের দাবি: ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রসংঘে অভিযোগ জানানো হয়েছে যে, ভারত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। কিন্তু ভারত সরকারের পালটা বক্তব্য,
“পাকিস্তানের উপর বিশ্বাস রেখেই এই চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তারা তিন তিনবার যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার জঙ্গি পাঠিয়েছে। এখন সেই বিশ্বাস রাখার আর কোনও প্রশ্ন নেই।”
কূটনৈতিক যুদ্ধের নতুন অধ্যায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত-পাক জলচুক্তি নিয়ে এই টানাপড়েন শুধুই জল নিয়ে নয়, বরং এক গভীর কূটনৈতিক বার্তা। একদিকে ভারত চায় জলের মাধ্যমে নিজের ভৌগলিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, অন্যদিকে পাকিস্তান এটাকে অস্তিত্ব সংকট হিসেবে দেখছে। দুই দেশের মধ্যে ‘জলযুদ্ধ’ কি এবার সত্যিই সামরিক যুদ্ধের দিকে এগোবে, না কি আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপে কোনও সমঝোতা হবে — এখন সেদিকেই নজর গোটা বিশ্বের।
সিন্ধু নদীর জল শুধু জল নয়, এটি এখন দুই দেশের আত্মমর্যাদার লড়াই। ৬৫ বছরের চুক্তি একদিনে বাতিল হয়নি, বরং বিশ্বাসঘাতকতা আর রক্তক্ষয়ের প্রতিশোধ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। প্রশ্ন একটাই—পাকিস্তান কি এবার সত্যিই যুদ্ধ ঘোষণা করবে? নাকি, সময় বুঝে পিছিয়ে আসবে?