Ambubachi 2025 : গুয়াহাটির প্রসিদ্ধ কামাখ্যা মন্দিরে শুরু হতে চলেছে অম্বুবাচী উৎসব। দেবীর বাৎসরিক ঋতুস্রাবের সময়কে ঘিরে পালিত হয় এই বিশেষ পর্ব। ২০২৫ সালের উৎসব শুরু হবে ২২শে জুন সকাল ৬টা থেকে এবং চলবে ২৫শে জুন পর্যন্ত। এই সময় মন্দিরের দরজা বন্ধ থাকে, বন্ধ থাকে পূজা, রান্না, জমিতে চাষ কিংবা শারীরিক সম্পর্কের মতো নিত্য কাজকর্মও। যেন এক সম্মিলিত নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে চলা আধ্যাত্মিক ব্রত।
দেবীর ঋতুচক্র মানেই পবিত্রতা ও সংযম
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় দেবী কামাখ্যা ঋতুমতী হন। তাই মন্দির চত্বরকে রাখা হয় নিষিদ্ধ ও সুরক্ষিত। এই সময় কোনও পূজা হয় না, নিত্যকর্মও বন্ধ রাখা হয়। তিন দিন ধরে চলা এই নিষেধের পর্ব শেষ হয় ‘স্নান’ ও ‘শুদ্ধিকরণ’ রীতিতে। এরপর চতুর্থ দিনে মন্দিরের দরজা আবার খুলে দেওয়া হয় ভক্তদের জন্য। প্রতি বছর এই সময় লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী ভিড় জমান কামাখ্যা ধামে। কেউ আসেন অসমের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে, কেউ আসেন বিদেশ থেকেও। তান্ত্রিক, আগোরা সাধু, ভক্ত, এবং সাধারণ পর্যটকদের এই একত্রিত হওয়া এক অনন্য মিলনমেলা তৈরি করে। মেলায় দেখা যায় আধ্যাত্মিক সাধনার ছাপ, সঙ্গে থাকে কঠোর নিয়মাবলীর অনুসরণ।
অম্বুবাচীর নিয়ম ও আচার
মন্দির বন্ধ থাকার তিন দিনে পালিত হয় ‘নিবৃতি’ নামক এক গম্ভীর ও পবিত্র পর্ব। রান্না, জমিতে চাষ, ফুল তোলা, কিংবা যৌন মিলনের মতো কর্ম থেকে এই সময় বিরত থাকেন বহু ভক্ত। বলা হয়, এই সময় প্রকৃতি বিশ্রামে যায়। দেবী প্রকৃতির প্রতীক, তাই তাঁর ঋতুকালকেও মর্যাদা দেওয়া হয় পরম নিষ্ঠায়। তিন দিন পর, চতুর্থ দিনে দেবীর ‘স্নান’ ও ‘শুদ্ধিকরণ’ সম্পন্ন হয়। এই দিন মন্দির পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। দেবীর পবিত্র জলের (অঙ্গোদক) এবং লাল বস্র (অঙ্গবাস্ত্র) ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা হয় প্রসাদ হিসেবে। এটি অত্যন্ত পবিত্র বলে মানা হয় এবং অনেক ভক্ত বাড়িতে নিয়ে যান সেটিকে পূজার বস্তু হিসেবে।
নারীত্বের আরাধনা
এই উৎসব শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং তা নারীর ঋতুচক্র, প্রজননক্ষমতা এবং নারীশক্তির এক প্রতীকী বন্দনার আকারও ধারণ করে। একদিকে যেখানে সমাজে ঋতুচক্র নিয়ে লজ্জা ও গোপনীয়তা থাকে, সেখানে এই উৎসব একেবারে বিপরীত বার্তা দেয়—ঋতুকাল কোনও অশুচি নয়, বরং তা জীবনচক্রের পবিত্র অংশ।
অম্বুবাচী যেন এক মহিলাত্বের পবিত্রতা উপলব্ধির উৎসব। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং এক সামাজিক বার্তাও দেয়—প্রকৃতির প্রতিটি রূপই গুরুত্বপূর্ণ, সম্মানযোগ্য। কামাখ্যা মন্দিরের এই উৎসব তাই শুধুই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, তা হয়ে উঠেছে নারীশক্তির উদযাপনও।