‘‘পেট ভরলে তবেই মানুষ কাজের শক্তি পায়’’—এই মন্ত্রেই দেশের গরিব পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে আরও একবার বড় সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের। ২০২০ সালের মার্চে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা (PMGKAY) এখন দেশজুড়ে প্রায় ৮১ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে চলেছে। মহামারির সময় যে প্রকল্প সাময়িক ভাবে শুরু হয়েছিল, তা এখন আরও পাঁচ বছর অর্থাৎ ডিসেম্বর ২০২৮ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
কী এই অন্ন যোজনা?
জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের (NFSA) আওতায় থাকা প্রত্যেক উপভোক্তার জন্য এই প্রকল্পের সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য। নতুন করে কোনও আবেদন করার প্রয়োজন নেই। যাঁদের কাছে অ্যান্ট্যোদয় (AAY) বা প্রায়োরিটি হাউসহোল্ড (PHH) রেশন কার্ড রয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকে এই সুবিধা পান।
এই যোজনায়—
-
প্রতি মাসে প্রত্যেক উপভোক্তা পান ৫ কেজি চাল বা গম,
-
প্রতিটি পরিবারকে দেওয়া হয় ১ কেজি ডাল।
এই রেশন পুরোপুরি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় দেশের প্রতিটি রাজ্যের ফেয়ার প্রাইস শপ বা সরকারি রেশন দোকানের মাধ্যমে।
কত মানুষের কাছে পৌঁছয় এই প্রকল্প?
বর্তমানে প্রায় ৮১.৩৫ কোটি নাগরিক এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য সহায়তা প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্প?
করোনা অতিমারির সময় বহু মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। একে তো আর্থিক অনিশ্চয়তা, তার উপর খাদ্যের সংকট। এই অবস্থায় PMGKAY প্রকল্প খাদ্য নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল। এখনো বহু নিম্নবিত্ত পরিবার এই প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে গ্রামীণ ও আধা-শহরাঞ্চলে। তাই এই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোয় একদিকে যেমন উপভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে, অন্যদিকে কেন্দ্রও রাজনৈতিকভাবে মানবিক বার্তা দিয়েছে।
কত টাকা ব্যয় হবে?
২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রকল্প চালাতে প্রায় ₹১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এই খরচ সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট থেকেই বহন করা হবে।
আবেদন পদ্ধতি কী?
এই যোজনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, আলাদা করে কোনও আবেদন করতে হয় না। যাঁদের বৈধ রেশন কার্ড রয়েছে এবং NFSA-এর অন্তর্ভুক্ত, তাঁরা অটোমেটিক ভাবেই এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী। তাই নতুন করে কোনও নথিপত্র জমা দেওয়ার ঝামেলা নেই।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের প্রকল্প আরও বেশি কার্যকর হতে পারে যদি এর সঙ্গে পুষ্টিকর খাদ্যের সরবরাহও যুক্ত করা যায়। পাশাপাশি, স্থানীয় স্তরে রেশন দোকানগুলোর কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ এবং দুর্নীতি রোধেও প্রশাসনিক নজরদারি জরুরি।
এই প্রকল্প শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, এটি দেশের সামাজিক স্থিতাবস্থার প্রতীকও বটে। খাদ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ধরে নিয়ে যে পরিবারগুলি এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করে, তাদের কাছে PMGKAY হয়ে উঠেছে এক ভরসার নাম।