ভারত সরকারের নতুন নির্দেশে বড়সড় ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশি একাধিক পণ্যের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিল দিল্লি। ফলে রীতিমতো অচলাবস্থার মুখে পড়েছে দুই দেশের মধ্যে চলা ৬৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য।
আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি সীমান্তে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
কোন কোন পণ্যে পড়ল নিষেধাজ্ঞা?
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে বাংলাদেশের তৈরি রেডিমেড পোশাক, ফল, কার্বনেটেড পানীয়, তুলো, সুতো, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র এবং কাঠের আসবাবপত্র। তবে কিছু পণ্য—যেমন মাছ, এলপিজি, ভোজ্য তেল এবং চুনাপাথর—এখনও সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে।
চাপে ইউনূস সরকার, আলোচনার ইঙ্গিত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন জানিয়েছেন, “ভারত সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে যদি কোনো সমস্যা থাকে, আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান চাই আমরা।”
একদিনে তৈরি হয়নি এই টানাপোড়েন
এই বাণিজ্যিক সংকট হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। গত বছর শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ক্রমেই খারাপের দিকে যেতে থাকে। দিল্লির অভিযোগ, ইউনূস সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে চিন সফরে গিয়ে ভারতবিরোধী মন্তব্যও করেছেন ইউনূস।
তদুপরি, বাংলাদেশ সম্প্রতি ভারতের সুতো আমদানি বন্ধেরও চেষ্টা করেছিল। সব মিলিয়ে ভারত আর চুপ না থেকে এবার সরাসরি কড়া পদক্ষেপ নিল।
বাংলাদেশের বাণিজ্য বিপর্যয়ের মুখে
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের রিপোর্ট বলছে, সীমান্তের এই পণ্যের আমদানির মাধ্যমে বছরে বাংলাদেশ ভারতের বাজার থেকে প্রায় ৬৫০০ কোটি টাকা আয় করত। সেই আয়ের রাস্তা এখন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে পদ্মা পাড়ে।
যেখানে এক সময় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আন্তরিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, আজ তা সংকটের মুখে। এই পরিস্থিতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা নির্ভর করছে দুই দেশের আলোচনার টেবিলে কী সিদ্ধান্ত হয় তার উপর। আপাতত দুই তরফেই চলছে চাপ ও পাল্টা চাপের খেলা।