মহারাষ্ট্রের পুনে, ইয়েরওয়াডা এবং ভোসারি—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশনে আজ সকালে আসে এক অজানা ফোন। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, ওই স্টেশনগুলোর কোথাও কোথাও বিস্ফোরক রাখা হয়েছে। হুমকি ছিল স্পষ্ট, সময় ছিল না বেশি। সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হয় পুলিশ প্রশাসন।
যেখানে হাজার হাজার যাত্রীর রোজকার যাতায়াত, সেখানে এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৈরি হয় চরম আতঙ্ক। কেউ বুঝে ওঠার আগেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গুজব—”স্টেশনে বোমা!”
চিরুনি তল্লাশি, পৌঁছাল বম্ব স্কোয়াড, ঘিরে ফেলা হলো এলাকা
যাত্রী ও রেলকর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই তড়িঘড়ি তিনটি স্টেশন ঘিরে ফেলে পুলিশ। খবর দেওয়া হয় বম্ব স্কোয়াড ও ডগ স্কোয়াডকে। প্রত্যেক প্ল্যাটফর্ম, স্টেশন চত্বর, ওয়েটিং রুম, টয়লট—সব খুঁটিনাটি জায়গায় চলে তল্লাশি।
রেললাইনের নিচেও চলে স্ক্যানিং। ডগ স্কোয়াডের ট্রেন্ড কুকুরদের সাহায্যে খোঁজা হয় বিস্ফোরক। যাত্রীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কিছু ট্রেনের যাতায়াত।
ভিড়ের মাঝে আতঙ্ক, যাত্রীরা ছুটলেন স্টেশন ছেড়ে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় প্রবল উদ্বেগ। অনেকেই হুড়োহুড়ি করে বেরিয়ে যান স্টেশন ছেড়ে। কেউ আবার ফোন করে বাড়ির লোককে জানান পরিস্থিতি। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্টেশনের বাইরেও জমে যায় জনসমাগম। পুলিশ বারবার জানায়, আতঙ্ক না ছড়িয়ে সহযোগিতা করতে।
হুমকি কি নিছক ভুয়ো? তদন্তে নামল ATS ও সাইবার সেল
মহারাষ্ট্র পুলিশের অনুমান, এই ফোন ‘হোঅ্যাক’ (ভুয়ো হুমকি) হতে পারে। তবে তারা কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ। সাইবার সেল খতিয়ে দেখছে, ফোনটি কোথা থেকে করা হয়েছিল বা কোনও ফেক আইডি বা ভার্চুয়াল নম্বর আছে কিনা।
একই সঙ্গে তদন্তে নামানো হয়েছে মহারাষ্ট্র ATS (Anti-Terrorism Squad)-কে। তারা খতিয়ে দেখছে, এর পিছনে কোনও সংগঠিত নাশকতামূলক পরিকল্পনা রয়েছে কি না। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এটি একটি “সিকিউরিটি ব্রিচ টেস্ট” হতে পারে—যেখানে পরিকল্পিতভাবে পুলিশের তৎপরতা যাচাই করা হচ্ছে।
কী বলছে প্রশাসন? কী বলছে পুলিশ?
পুনে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এখনো পর্যন্ত কোনও বিস্ফোরক বা সন্দেহজনক বস্তু পাওয়া যায়নি। তবে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। পুনে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছি। সিকিউরিটি নিয়ে কোনও ছাড় নয়।” পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
হুমকি বাস্তব না সাজানো? খুঁজছে গোটা প্রশাসন
এখনও পর্যন্ত এই হুমকি কতটা বাস্তব, আর কতটা সাজানো—তা স্পষ্ট নয়। তবে এমন একটা সময়, যখন দেশের নিরাপত্তা নিয়ে নিত্যদিন চ্যালেঞ্জ বাড়ছে, তখন এই ধরনের ফোন গোটা সিস্টেমকে নাড়িয়ে দিয়েছে বলাই যায়।
পুলিশ, গোয়েন্দা এবং সাইবার বিশেষজ্ঞরা একযোগে তদন্ত চালাচ্ছেন। সত্যিই যদি এর পেছনে কোনও বৃহৎ ষড়যন্ত্র থাকে, তা হলে পরের পদক্ষেপ কী হবে—সেদিকেই তাকিয়ে এখন সবাই।