চাকরি ও বেতন সংক্রান্ত দাবিতে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের সদর দফতর, অর্থাৎ বিকাশ ভবনের সামনে বুধবার বিক্ষোভে সামিল হন একদল শিক্ষক। দিনের শুরু থেকেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে চত্বরে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হয় এলাকা খালি করার জন্য। কিন্তু আন্দোলনকারীরা নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। শেষমেশ হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। ঘটে ধস্তাধস্তি, যার ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আদালতের নজরে আসে ঘটনা, শুনানি আজ
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা হাই কোর্টে হয় শুনানি। বিচারপতিরা এই বিক্ষোভ এবং পুলিশের পদক্ষেপ ঘিরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন। আদালত জানিয়ে দেয়—এই ধরনের নাগরিক আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনই নাগরিকদের অধিকারও সম্মান করা উচিত।
হাজিরা দিতে হবে, কিন্তু গ্রেফতার নয়
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দুই শিক্ষকের নাম চিহ্নিত করে বিধাননগর থানায় তাঁদের হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত একইসঙ্গে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে—ওই দুই শিক্ষককে পুলিশ কোনওভাবেই গ্রেফতার বা হেফাজতে নিতে পারবে না। এ যেন একপ্রকার সুরক্ষা বলয় তৈরি করেই হাজিরার নির্দেশ দিল আদালত।
তদন্তে স্বচ্ছতা, কেস ডায়েরি তলব আদালতের
শুধু এখানেই থেমে থাকেনি হাই কোর্ট। পুলিশের তদন্ত পদ্ধতি, বিক্ষোভ মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ এবং পুরো ঘটনার নথিপত্র জানতে চেয়ে কেস ডায়েরি তলব করেছে আদালত। অর্থাৎ, পুলিশ কাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এনেছে, কী তথ্যপ্রমাণ রয়েছে—সব কিছুই যাচাই করতে চায় আদালত।
রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
এই ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁদের দীর্ঘদিন ধরে দাবি পূরণ করা হয়নি। চাকরির প্রতিশ্রুতি মিললেও বাস্তবে কোনও পদক্ষেপ হয়নি বলেই তাঁদের রাস্তায় নামা। অন্যদিকে, পুলিশের তরফে দাবি করা হচ্ছে—তাঁরা আইন মেনেই কাজ করেছেন।
পরবর্তী শুনানিতে নজর শিক্ষামহলের
এখন সবার চোখ আগামী শুনানির দিকে। আদালত এরপর কী নির্দেশ দেয়, তদন্ত কোন পথে এগোয়—সেই দিকেই তাকিয়ে শিক্ষামহল থেকে শুরু করে প্রশাসনিক মহলও। আদালতের এই হস্তক্ষেপে আপাতত স্বস্তিতে আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। তবে রাজ্য সরকারের কাছে এটাই বড় বার্তা—এই ধরনের বিক্ষোভ দমন করা নয়, বরং সমস্যার শিকড়ে পৌঁছে সমাধান খোঁজাই এখন প্রয়োজন।