চালু হতে না হতেই ফের ধাক্কা খেল কলকাতা মেট্রো। সোমবার সকালে একদিকে বৃষ্টির জেরে বন্ধ হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্টেশন— চাঁদনি চক ও সেন্ট্রাল, আর অন্যদিকে, কয়েক ঘণ্টা পরই বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনে ঘটল আত্মহত্যার চেষ্টা। সকাল থেকেই শহরের অন্যতম নির্ভরযোগ্য যাতায়াতের মাধ্যম মেট্রো ঘিরে তীব্র ভোগান্তির ছবি ধরা পড়ে। একদিনে দুই বড় বিপর্যয়ে নাজেহাল অফিসযাত্রী থেকে স্কুলপড়ুয়ারা।
সকালবেলাতেই জল ঢুকে বন্ধ হয় মেট্রো পরিষেবা
সকাল ৮টা নাগাদ কলকাতায় চলতে থাকা বৃষ্টির জেরে চাঁদনি চক ও সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনে জল ঢুকে পড়ে। এর ফলে বন্ধ করে দিতে হয় দুই স্টেশনে ট্রেন চলাচল। এই সময় প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত মেট্রোর পরিষেবা ব্যাহত হয়। যাত্রীরা জানান, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন তাঁরা। “প্রতিদিন স্কুলের প্রথম ক্লাসে থাকি। আজ আর পারলাম না,” বলেন এক স্কুলছাত্রী।
মাত্র ২০ মিনিটেই ফের ছন্দপতন, এবার মরণঝাঁপ
সকাল ১১টা নাগাদ মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক হয়। প্ল্যাটফর্মে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে না ফেলতেই ফের বিপত্তি। ঠিক সকাল ১১টা ২০ মিনিটে বেলগাছিয়া স্টেশনের আপ লাইনে ঝাঁপ দেন এক পুরুষ যাত্রী। ঘটনার পরই বন্ধ হয়ে যায় শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা। বর্তমানে কেবলমাত্র গিরিশ পার্ক থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত ট্রেন চলছে।
আতঙ্ক ছড়াল স্টেশনে, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনার পরপরই স্টেশনে ছুটে আসে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় আরজিকর হাসপাতালে। তাঁর অবস্থা সম্পর্কে এখনও কিছু জানায়নি কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে, “মেট্রোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে কী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে?” — জানতে চেয়েছেন এক যাত্রী।
একদিনে দু’বার ধাক্কা, প্রশাসনের উদ্বেগ
একদিনে একাধিক ব্যাঘাতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকেই বলছেন, কলকাতা মেট্রোকে ‘লাইফলাইন’ বলা হলেও এই ধরনের ঘটনায় সেই লাইফলাইন ঘন ঘন বিঘ্নিত হচ্ছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে, “আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। জল ঢোকা আটকাতে বিশেষ মেকানিজম চালু হচ্ছে। আত্মহত্যা রোখার জন্য নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।”
প্রশ্নের মুখে শহরের লাইফলাইন
যে শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ মেট্রোর উপর নির্ভর করেন, সেই শহরে একদিনে দু’বার পরিষেবা বন্ধ হওয়া নিছক একটি দুর্ঘটনা নয়। এটি গোটা ব্যবস্থার গভীর সমস্যা তুলে ধরে। হোক সেটা বৃষ্টির জল, নাকি মনের ভার — কলকাতার মেট্রো যেন আর টিকতে পারছে না বাইরের ঝড় ও ভিতরের দহন থেকে।