সোমবার সকাল। সপ্তাহের প্রথম কর্মব্যস্ত দিন। কিন্তু সেই শুরুতেই ছন্দপতন কলকাতার অন্যতম লাইফলাইন মেট্রোতে। লাগাতার রাতভর বৃষ্টিতে চাঁদনি চক ও সেন্ট্রাল স্টেশনের মাঝে টানেলে জমে গেল জল। তার জেরেই বন্ধ হয়ে যায় মধ্যবর্তী অংশের মেট্রো পরিষেবা। যাত্রীরা পড়েন চূড়ান্ত দুর্ভোগে। কেউ পৌঁছাতে পারলেন না সময়মতো অফিসে, কেউ বা স্কুল-কলেজে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব পাম্প দিয়ে জল বের করার চেষ্টা চলছে। তবে পরিষেবা পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে কতটা সময় লাগবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনও সময়সীমা দিতে পারেনি মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
কোথায় বন্ধ, কোথায় চালু মেট্রো?
মেট্রো সূত্রের খবর, ময়দান থেকে কবি সুভাষ এবং গিরিশ পার্ক থেকে দক্ষিণেশ্বর—এই দুটি সেকশনে মেট্রো চলছে। কিন্তু চাঁদনি ও সেন্ট্রাল স্টেশনের মাঝখানে মাটির নীচে লাইনের উপর জল জমে যাওয়ায় মাঝের রুট আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে মেট্রো সংযোগ কার্যত ছিন্ন।
আগেও ঘটেছে একই ঘটনা
এই প্রথম নয়। গত শনিবারও যতীন দাস পার্ক ও নেতাজি ভবন স্টেশনের মাঝে একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। নিকাশি নালায় হঠাৎ জল ভর্তি হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় থার্ড রেলের বিদ্যুৎ সংযোগ। এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ ছিল পরিষেবা। স্টেশনে স্টেশনে তখন যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। অফিস টাইমে মেট্রো বন্ধ হলে যে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা আর নতুন করে বলে দিতে হয় না।
পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন
বারবার বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ছে পাতালপথে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে মেট্রো রেল টানেলের জল নিরোধক ব্যবস্থা কোথায়? কেন বারবার জল ঢুকে যায় গুরুত্বপূর্ণ লাইনে? বৃষ্টির ছোঁয়া লাগলেই যদি পরিষেবা বন্ধ হয়, তাহলে সেই পরিবহণ ব্যবস্থার উপর কতটা ভরসা করা যায়? শুধু প্রশ্ন নয়, যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভও ক্রমেই বাড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, “এত বড় শহরের এত পুরনো মেট্রো পরিষেবা। তবু এখনও বৃষ্টির দিনে মেট্রো চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় ভোগে। কেউ এর দায় নিচ্ছে না। প্রতিবারই শুধু ‘খুব শীঘ্র স্বাভাবিক হবে’ বলেই দায় সারা হয়।”
কোনও স্থায়ী সমাধান হবে?
বৃষ্টি কলকাতায় নতুন নয়। বর্ষা এলেই জল জমা এখন নিত্য চিত্র। কিন্তু পাতালপথের মতো পরিকাঠামোয় এমন বারবার জল ঢোকা নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। যাত্রীদের দাবি—মেট্রো কর্তৃপক্ষকে এবার স্থায়ী সমাধানের দিকে এগোতে হবে। শুধু পাম্প দিয়ে জল তোলা, নাকি নিকাশির আধুনিকীকরণ—সেটা ঠিক করবে তারা। কিন্তু পরিষেবা যেন আর বন্ধ না হয়।
একটা শহরের পরিকাঠামো কতটা উন্নত, তা বোঝা যায় সংকটে তার প্রতিক্রিয়া দেখে। কলকাতার মেট্রো সেই পরীক্ষায় বারবার প্রশ্নের মুখে। প্রশাসনের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ—এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা।