Smuggling : উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি জেলা। ভারত-নেপাল সীমান্ত ঘেঁষা এই অঞ্চল বরাবরই চোরাচালানকারীদের পছন্দের এলাকা। সম্প্রতি এখানেই এসএসবি (সশস্ত্র সীমা বল) ও পুলিশ বাহিনীর যৌথ অভিযান থেকে সামনে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সীমান্তবর্তী গৌরিফন্টা এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হল প্রায় ২১ হাজার চাইনিজ যৌন পুতুল!
এই ঘটনার জেরে জেলা তো বটেই, গোটা দেশজুড়ে শুরু হয়েছে উত্তাল বিতর্ক—এটা কি নিছকই পাচার, না কি চিনের পক্ষ থেকে ভারতে কোনও প্রকার ‘সোশ্যাল ডিসরাপশন’-এর চেষ্টা?
৭২টি বস্তায় কি ছিল?
সূত্রের খবর, সুডা ঘাটে আটক করা হয় একটি সন্দেহভাজন পিকআপ ভ্যান। গাড়িটির ভিতর ছিল ৭২টি হলুদ রঙের প্লাস্টিকের বস্তা। প্রত্যেকটির মধ্যে একাধিক কাগজের বাক্স, যার মধ্যে গুঁজে রাখা ছিল সেক্স টয়। সবমিলিয়ে প্রথম পর্যায়ে উদ্ধার হয় প্রায় ১০,৮০০টি চাইনিজ সেক্স টয়।
এই চালান কোথা থেকে এল, কেন এল, বা কার জন্য এল—এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুলিশ পৌঁছায় পলাতক অভিযুক্ত বিজয় সিং রানা-র বাড়িতে। সেখানেও চমকে ওঠে পুলিশ।
বাড়ির বাইরে আরও ৯৩০০ যৌন পুতুল!
বিজয়ের বাড়ির বাইরে রাখা ৬২টি হলুদ বস্তা ঘেঁটে আরও ৯,৩০০ যৌন পুতুল উদ্ধার হয়। সবমিলিয়ে সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ২১,১০০টি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই সব পণ্যের বাজারমূল্য ২ কোটি ১ লক্ষ টাকা।
পাচারের ছক, গ্রেফতার ও তদন্ত
এই পাচারচক্রে জড়িত সন্দেহে নইম (পুত্র: আব্দুল কাইয়ুম খান) এবং মুস্তাফা আহমেদ (পুত্র: অনিল আহমেদ) নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড বিজয় সিং রানা ও সানু সিদ্দিকি এখন পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে জোর কদমে।
চিনের রহস্যময় ছক?
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই বিপুল সংখ্যক যৌন পুতুল ভারতীয় বাজারে আসছিল কেন? সাধারণত এই ধরনের পণ্য চোরাপথে আসে মূলত বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু একসঙ্গে ২১ হাজার যৌন পুতুলের চালান ধরা পড়া ইঙ্গিত দিচ্ছে কোনও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের দিকেও।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করছেন, এটি হতে পারে চিনের তরফে ভারতের সামাজিক পরিকাঠামোকে ধ্বস্ত করার একটি ‘সফট অ্যাটাক’ বা সংস্কৃতি আক্রমণের প্রচেষ্টা।
নেপাল সীমান্ত ও চোরাচালানের পুরনো রুট
ভারত-নেপাল সীমান্ত চিরকালই চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। এখানে নজরদারি দুর্বল হওয়ার সুযোগ নিয়ে বহুবার অস্ত্র, মাদক, নকল ওষুধ এমনকি জাল নোট পাচারের ঘটনা ঘটেছে। তবে এভাবে যৌন পুতুল পাচার—তা-ও এই পরিমাণে—সাম্প্রতিককালের মধ্যে নজিরবিহীন।
পরিশেষে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে—এই ঘটনার পিছনে কি শুধুই লাভের মোহে গড়া চোরাকারবারি চক্র, নাকি কোনও বিদেশি শক্তির সুনিপুণ পরিকল্পনা? পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত শেষ হলে হয়তো এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার আরও গভীর সত্য সামনে আসবে।