Electricity Export : ভারতের শক্তি খাতে শুরু হতে চলেছে এক নতুন যুগ। বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর ঘোষণা করেছেন, ভারত এবার সাগরের নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ পাঠাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (UAE)। এই যুগান্তকারী প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। শক্তি খাতে ভারতের আন্তর্জাতিক রপ্তানি ক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটা এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সৌদি ও আমিরশাহির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ
বিদ্যুৎমন্ত্রী জানিয়েছেন, সৌদি আরব ও UAE-র সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ভারত। সৌদি প্রকল্পে খরচ হবে ৪৭ হাজার কোটি টাকা এবং UAE প্রকল্পে খরচ হবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এই দুটি প্রকল্পই সমুদ্রের নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে তৈরি হবে। প্রতিটি লাইনের ক্ষমতা হবে ২ গিগাওয়াট। সৌদির সঙ্গে সংযোগকারী লাইনের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১,৪০০ কিমি, আর UAE প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ১,৬০০ কিমি।
নবায়নযোগ্য শক্তিতে জোর
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পরমাণু বিদ্যুৎকে ব্যবহার করে বিদেশে রপ্তানি। খট্টর জানিয়েছেন, ২০৩৫ সালের পর আর কোনও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হবে না। এর পরিবর্তে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার বেস লোড জোগাতে পারমাণবিক শক্তির উপরে জোর দেওয়া হবে।
এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে এমনও জানানো হয়েছে, যেসব রাজ্য ভূমিকম্পপ্রবণ নয় (সিসমিক জোন ৫-এ পড়ে না), সেখানে অন্তত একটি করে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সময় কমছে পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণে
বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, আগে যেখানে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করতে ১৩ বছর সময় লাগত, তা এখন ৮-৯ বছরে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে ভারত অনেক দ্রুত নিজস্ব গ্রিড শক্তি উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে এবং বাড়তি শক্তি রপ্তানির পথও খুলে যাবে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের শক্তি কূটনীতি
বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাহিদা মেটাতে ভারতের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিকভাবে এক বিশাল ‘পাওয়ার ডিপ্লোমেসি’র উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে সৌদি আরব ও UAE রিনিউয়েবল শক্তির দিকে ঝুঁকছে। সেই প্রেক্ষিতে ভারতের এই সহযোগিতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত বন্ধুত্বকেও আরও দৃঢ় করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই দুই প্রকল্প সফলভাবে চালু হয়, তাহলে ভারত হবে বিশ্বের অন্যতম বড় বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক দেশ। সেই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব শক্তির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থানও অনেক উঁচুতে উঠে যাবে।
প্রশ্ন একটাই: কবে বাস্তব হবে এই স্বপ্ন?
ঘোষণা হয়েছে, পরিকল্পনা হয়েছে, খরচ বরাদ্দ হয়েছে—এখন প্রশ্ন, কবে এই প্রকল্প বাস্তবে রূপ পাবে? দেশের ভিতরে অনেক সময় বড় প্রকল্প কাগজে কলমেই থেকে যায়, বাস্তবে পৌঁছায় না। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য, এবার আর দেরি নয়—আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।
এই প্রকল্প যদি নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়, তাহলে শুধু আর্থিক নয়, কূটনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও ভারত এক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।