রাজ্যের দাবিকে বারবার উপেক্ষা করে চলেছে কেন্দ্র—এই অভিযোগ আবারও সামনে আনলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়া। শুক্রবার দুর্গাপুর ব্যারেজ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, দামোদর নদীর ড্রেজিং নিয়ে রাজ্য যতই অনুরোধ করুক না কেন, কেন্দ্রীয় সরকার সেই দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।
কেন্দ্রীয় উদাসীনতা নিয়ে সরব সেচমন্ত্রী
দুর্গাপুর ব্যারেজ পরিদর্শনের সময় মানস ভুইয়া জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার চিঠি দিয়ে দামোদর নদের ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। রাজ্যের তরফে টেকনিক্যাল রিপোর্ট, পরিস্থিতির বাস্তব ছবি, বর্ষার সময় প্লাবনের আশঙ্কা—সবই তুলে ধরা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। সেচমন্ত্রী বলেন, “দামোদর উপত্যকার মানুষ প্রতি বছর বন্যার ঝুঁকিতে থাকেন। সময়মতো ড্রেজিং না হলে জল বেরোতে পারে না, আর তখনই বিপদ বাড়ে। আমরা বারবার জানাচ্ছি, অথচ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।”
রাজ্যের একার পক্ষে অসম্ভব
সেচমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ড্রেজিংয়ের জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি ও বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন হয়, তা রাজ্যের পক্ষে এককভাবে বহন করা সম্ভব নয়। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথ উদ্যোগে কাজ করলে তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এদিনের পরিদর্শনে সেচ দফতরের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, বর্তমানে দুর্গাপুর ব্যারেজ ও দামোদরের বেশ কিছু অংশে নাব্যতা কমে গেছে। ফলে বর্ষাকালে জলস্তর বাড়লে দ্রুত প্লাবনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেচমন্ত্রী সেই উদ্বেগেরই প্রতিধ্বনি করেছেন।
রাজনীতির আঙিনায় ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা
যদিও সেচমন্ত্রী কোনও রাজনৈতিক দলের নাম করেননি, তবুও তাঁর বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট ছিল কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি ক্ষোভ। তিনি বলেন, “আমরা তো শুধু রাজ্যের মানুষের নিরাপত্তার কথা বলছি। এখানে রাজনীতি করার কিছু নেই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার তা বুঝতে চাইছে না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্বাস
এদিন পরিদর্শনের শেষে সেচমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, রাজ্য এককভাবে যা করার আছে, সবটাই করবে। বর্ষার আগেই কিছু অংশে ড্রেজিং শুরু হবে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি, কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চলবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
দামোদর নদীর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের সহায়তা না পেলে প্লাবন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যে কঠিন হবে, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন সেচমন্ত্রী। এবার দেখার, কেন্দ্রীয় সরকার এই বার্তা কতটা গুরুত্ব দিয়ে নেয়।