গালওয়ান সংঘর্ষের পর কেটে গেছে কয়েক বছর। সীমান্তে এখনও উত্তেজনা, সন্দেহ, ও অনাস্থার আবহ বজায়। এই পটভূমিতেই ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সক্রিয় ভূমিকায় নামল দিল্লি। শ্যাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (SCO)-এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডং জুনের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।
কী আছে সেই ৪ দফা প্রস্তাবে?
এই চার-পয়েন্ট পরিকল্পনা মূলত সীমান্ত উত্তেজনা কমানো এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের রূপরেখা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে—
-
২০২৪ সালের ডিসএঙ্গেজমেন্ট চুক্তি বাস্তবায়নে জোর: পূর্ব লাদাখসহ সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে পূর্ব নির্ধারিত প্রত্যাহার চুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
-
সীমান্তে নিয়মিত উত্তেজনা হ্রাসের পদক্ষেপ: সেনাবাহিনীর পর্যায়ে কমান্ডার স্তরের আলোচনা আরও কার্যকর করে সংঘাতের সম্ভাবনা হ্রাসে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
-
সীমানা চিহ্নিতকরণ ও স্পষ্টকরণ: বহু বিতর্কিত অঞ্চল এখনও সীমা নির্ধারণহীন। এই সীমারেখা স্পষ্ট করতে যৌথ তৎপরতা প্রস্তাব করেছেন রাজনাথ সিং।
-
বিশেষ প্রতিনিধি স্তরে কৌশলগত আলোচনা পুনরুজ্জীবন: সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট মেকানিজম গঠন করে নিয়মিত আলোচনা চালানোর কথা বলা হয়েছে।
পাকিস্তান প্রসঙ্গেও বার্তা
বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা ছাড়াও পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের উদ্বেগও তুলে ধরা হয়। রাজনাথ সিং সাফ জানান, কোনও দেশ যদি সন্ত্রাসকে মদত দেয়, তবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। ফলে ভারত এ বিষয়ে কোনও আপস করবে না।
কৈলাশ মনসারোভার যাত্রা আবার শুরু
বৈঠকের আরেক উল্লেখযোগ্য দিক হল, কৈলাশ মনসারোভার যাত্রা পুনরায় চালু হওয়া। দীর্ঘ ছয় বছর পর ভারতের তীর্থযাত্রীরা এই পবিত্র যাত্রায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন। এটি শুধু ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং ভারত-চীন সম্পর্কেও একটি ইতিবাচক বার্তা বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
SCO মঞ্চে ভারতীয় কূটনীতির বার্তা
গালওয়ান সংঘর্ষের পর প্রথমবার এমন উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক আলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে SCO মঞ্চে। এখান থেকেই বার্তা দেওয়া হয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সদিচ্ছার কোনও অভাব নেই, তবে চীনকেও একই রকম দায়িত্ব নিতে হবে। বিশেষত সীমান্তে শৃঙ্খলা ও আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি। রাজনাথ সিং-এর এই কৌশলগত পদক্ষেপ ভারত-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয়, চীন এই ৪ দফা প্রস্তাবে কতটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রসর হয়।
