আইন পড়তে এসে নিজেই আইন ভাঙার ভয়ঙ্কর ঘটনার শিকার! কসবা ল’ কলেজের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রভাবশালী ছাত্রনেতা সহ আরও দুইজনকে। জাতীয় মেডিক্যাল কলেজে সম্পন্ন নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষায় উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা শুনলে গা শিউরে ওঠে— যৌনাঙ্গে ক্ষত, গলায় কামড়ের দাগ, শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। মেডিক্যাল রিপোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছে, ছাত্রীটিকে “বলপূর্বক ধর্ষণ” করা হয়েছে।
মেডিক্যাল রিপোর্টে নৃশংসতার ছাপ
ঘটনার তদন্তে থাকা এক অফিসার জানান, মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী, নির্যাতিতার গলায় রয়েছে পরিষ্কার কামড়ের দাগ, যা সন্দেহাতীতভাবে ধর্ষণের সময়ের শারীরিক অত্যাচারের ইঙ্গিত দেয়। যৌনাঙ্গে গভীর আঘাতের চিহ্ন ও রক্তপাত ছিল, যা চিকিৎসকদের মতে, জোরপূর্বক শারীরিক সহবাসের ইঙ্গিত বহন করে। চিকিৎসকরা আরও জানিয়েছেন, পুলিশ যখন নির্যাতিতাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসে, তখন তিনি অত্যন্ত আতঙ্কিত অবস্থায় ছিলেন এবং চোখে-মুখে ছিল দুঃসহ অভিজ্ঞতার ছাপ।
ধর্ষণকাণ্ডে তৃণমূল ছাত্রনেতা, কলেজে অস্থায়ী কর্মী
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত হলেন স্থানীয় এক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা, যিনি কলেজেরই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ওই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই নানা অভিযোগ জমা পড়েছিল, তবে এবারের ঘটনা বিস্ফোরক। জানা গেছে, ঘটনার সময় তিনি একাই ধর্ষণে লিপ্ত হন, বাকি দুই অভিযুক্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন ও সাহায্য করেন নিগ্রহে। পুলিশ তিনজনকেই গ্রেফতার করেছে এবং ইতিমধ্যে আদালতে পেশ করে রিমান্ডে নিয়েছে। অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন, কলেজের CCTV ফুটেজ এবং ছাত্রীর বয়ান সব কিছুই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নির্যাতিতার বয়ানে উঠে এল ভয়াবহতা
চিকিৎসকদের সামনে ছাত্রীটি জানিয়েছে, তাঁকে জোর করে কলেজের একটি নির্জন কক্ষে আটকে রাখা হয়। এক ব্যক্তি তাঁকে ধর্ষণ করে, বাকি দুজন বাইরে পাহারা দিচ্ছিল। চিৎকার করলে আরও মারধরের হুমকি দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
কলেজ চত্বরে উত্তেজনা, রাজনীতির তীব্র রেষ
ঘটনার পরে কলেজ চত্বরে ছড়িয়েছে প্রবল উত্তেজনা। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে একজন অভিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মী কলেজ চত্বরে অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারত? কেন কলেজ কর্তৃপক্ষ আগে থেকে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি? বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনার জন্য সরাসরি শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করেছে। বিজেপির মুখপাত্র বলেন, “এই রাজ্যে আইন বলে কিছু নেই। ক্ষমতার অপব্যবহারে মহিলারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন, আর সরকার চুপ!” তৃণমূলের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কেবল অনানুষ্ঠানিক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, অভিযুক্তরা দলের সঙ্গে “সংযুক্ত” নয়। তবে পুলিশের হাতে ধৃত ছাত্রনেতার সামাজিক মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পরিচয় লেখা রয়েছে।
তদন্ত চলছে, নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে নির্যাতিতাকে
নির্যাতিতাকে এখন বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর মানসিক কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে এবং পুলিশ তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। তদন্তকারী অফিসার জানান, “এই ঘটনায় কোনওরকম রাজনৈতিক চাপ কাজে লাগবে না। অপরাধী যেই হোক, কঠোর শাস্তি হবে।”