TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

প্রথমে পায়ে ধরা তারপরে ধর্ষণ… কি হয়েছিল ধর্ষণের সময়? ভয়ানক কথা জানালেন ওই ছাত্রী

কসবার ল’ কলেজে ধর্ষণ, ভিডিও করে হুমকি, মাথায় আঘাত, শ্বাসকষ্ট, গার্ড রুমে বলপূর্বক নির্যাতন—সবটা লেখা ছাত্রীর অভিযোগপত্রে। ধৃত তিন অভিযুক্তের একজন তৃণমূল ছাত্রনেতা।

Debapriya Nandi Sarkar

“পায়ে ধরেছিলাম… আমি তখন অর্ধমৃত। তবু ওরা ছাড়েনি।”—আইনের ছাত্রী হয়েও নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া আইনের চরম লঙ্ঘনের ঘটনার এমনই নির্মম বিবরণ দিলেন কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল’ কলেজের নির্যাতিতা। মাত্র ২৪ বছরের এক ছাত্রীর অভিযোগে কেঁপে উঠেছে গোটা শহর। অভিযুক্তরা কেউ ছাত্র, কেউ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) প্রভাবশালী নেতা। ঘটনায় ধৃত মনোজিৎ মিশ্র (বয়স ৩১), জইব আহমেদ (১৯) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০)। তিনজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হুমকি, শারীরিক নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণের মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

প্রেম প্রত্যাখ্যানের ‘শাস্তি’ ধর্ষণ?

নির্যাতিতার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছাত্রী তা প্রত্যাখ্যান করেন জানিয়ে দেন, তাঁর প্রেমিক আছে এবং তিনি সম্পর্ক ছাড়তে পারবেন না। এই প্রত্যাখ্যানই নাকি মনোজিতের ‘অপমান’। এরপর শুরু হয় প্রতিশোধের ভয়ঙ্কর খেলা। ২৫ মে দুপুর ১২টা নাগাদ ফর্ম ফিলআপ সেরে ছাত্রটি কলেজের ইউনিয়ন রুমে যান। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সবাই বেরিয়ে গেলেও তিনি বেরোতে পারেননি। তখনই জইব (জে) তাঁকে আটকে রাখে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় প্রমিত ও মনোজিৎ। জয়ব ওই ছাত্রীকে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে যৌন সম্পর্কের জন্য জোর করতে থাকে। ছাত্রী বারবার অনুরোধ করেন, কাঁদেন, বলেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ইনহেলার চাইলেও তা দেরিতে আসে। কিছুক্ষণ পর দুই অভিযুক্ত তাঁকে আবার ইউনিয়ন রুমে নিয়ে যায়, জোর করে গার্ড রুমে নিয়ে গিয়ে সেখানে ধর্ষণ করা হয়।

‘ভিডিও করে হুমকি দেয়, বললে ফাঁস করে দেবে’

ছাত্রী জানাচ্ছেন, তাঁকে জোর করে পোশাক খুলে ধর্ষণ করা হয়। প্রক্রিয়ার সময় দু’টি ভিডিও রেকর্ড করা হয়। বলা হয়, “সহযোগিতা না করলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া হবে।” মাথায় জোরে আঘাত করা হয়। একসময় হকি স্টিক দেখিয়ে ভয় দেখায় ওরা। তিনি আরও বলেন, “আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু এটাই আমার বাস্তব। আমি একজন আইনের ছাত্রী হয়েও, নিজেই সুবিচারের জন্য ভিক্ষা চাইছি।”

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

গার্ড রুমে ধর্ষণের সময় কলেজের নিরাপত্তারক্ষী কী করছিলেন? অভিযোগ, গার্ড জানতেন কী ঘটছে, তবুও তিনি নীরব দর্শক ছিলেন। এমনকী গার্ড রুম বাইরে থেকে বন্ধও করে রাখা হয়। ছাত্রীর দাবি, কলেজের অনেকেই জানতেন, এই অভিযুক্তর দাপট কতটা। সে TMCP ইউনিটের মাথা ছিল।

রাজনৈতিক চাপ? অভিযুক্তের তৃণমূল যোগ নিয়ে বিতর্ক

মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক অভিযোগ ছিল। সে নিয়মিত কলেজ চত্বরে ‘দাদাগিরি’ চালাত। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে নিজেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বলে পরিচয় দিত। যদিও TMCP-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেছেন, “মনোজিৎ একসময় TMCP করত, এখন আর কোনও সম্পর্ক নেই।” বিরোধী বিজেপি বলছে, “এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের প্রকৃত চরিত্র সামনে এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জবাব দিতে হবে।”

আইনি লড়াইয়ের পথে নির্যাতিতা

ছাত্রী নিজেই লিখেছেন, “আমি একজন আইনের ছাত্রী হয়েও নির্যাতিতা। আমি সুবিচার চাই।” তাঁর সাহসিকতায় এখন প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেডিক্যাল রিপোর্টে বলপূর্বক ধর্ষণের উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় একদিকে যেমন উঠছে কলেজ নিরাপত্তা ও রাজনীতির প্রশ্ন, তেমনই অপরদিকে সামনে এসেছে এক তরুণীর সাহসিকতা—যিনি ভয়কে জয় করে, ক্ষমতাশালী ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।