ভারতের পরিষেবা খাতে এক নতুন বিপ্লব আনতে চলেছে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার বা জিসিসি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির জন্য ভারতে থাকা এই বিশেষায়িত কেন্দ্রগুলি এখন দেশের অন্যতম বড় রফতানি শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। এখনই বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের মূল্য তৈরি করে এই খাত। ২০৩০ সালের মধ্যে এই রাজস্বই পৌঁছে যাবে ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে, এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা ICAI (Institute of Chartered Accountants of India)-এর সাম্প্রতিক এক সম্মেলনে।
দেশে এখনই ১,৭০০-র বেশি জিসিসি, লক্ষ্য ৪,০০০
পররাষ্ট্রমন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি সিএ মহাবীর সিংভি জানিয়েছেন, “ভারতে এখন ১,৭০০-র বেশি জিসিসি রয়েছে, যারা বিশ্বের ১,০০০-এরও বেশি সংস্থাকে পরিষেবা দিচ্ছে।” বর্তমানে প্রায় ২০ লক্ষ পেশাদার এই খাতে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ও বিশ্লেষকরা।
রফতানি শুধু পণ্য নয়, এখন ‘কমপ্লায়েন্স’ আর কনসাল্টিং-ও
“ভারত এখন আর শুধু জিনিসপত্র রফতানি করছে না, রফতানি করছে কমপ্লায়েন্স, ফিনান্সিয়াল ক্ল্যারিটি আর স্ট্র্যাটেজিক রিসোর্স,” বলছেন সিংভি। তিনি আরও জানিয়েছেন, আজকের জিসিসি-গুলি আর শুধুমাত্র ব্যাক-অফিস নয়, বরং সাইবার সিকিউরিটি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, জেনারেটিভ AI, ESG রিপোর্টিং, ডিজিটাল ট্যাক্স অ্যাডভাইজরির মত উন্নত পরিষেবার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ
ICAI সভাপতি সিএ চরঞ্জোত সিং নন্দা জানান, “এখনই প্রায় ৮০,০০০ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট জিসিসিতে কাজ করছেন। তবে ভবিষ্যতে তাঁদের শুধু কর্মী হিসেবে নয়, উদ্যোক্তা হিসেবেও দেখতে চাই।” তিনি বলেন, “ভারত আজ ‘ফ্যাক্টরি অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস’। বিদেশের বহু দেশে দোকান বন্ধ হয়ে ভারতে আউটসোর্সিং চলে আসছে। বিশেষত, গুরগাঁও এখন জিসিসি-র আন্তর্জাতিক হাব হয়ে উঠেছে।”
২৫ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা
ICAI-এর সহ-সভাপতি সিএ প্রসন্ন কুমার ডি বলেন, “ভারতে ২০৩০ সালের মধ্যে আরও ২,৫০০ নতুন জিসিসি তৈরি হবে। ফলে মোট সংখ্যা পৌঁছবে ৪,০০০-এরও বেশি। কর্মসংস্থান তৈরি হবে অন্তত ২৫ লক্ষ পেশাদারের জন্য।” কুমার জানান, “আজকের দিনে অ্যাকাউন্টিং ছাড়াও জিসিসি হয়ে উঠেছে ডেটা অ্যানালিটিক্স ও AI-র পাওয়ারহাউস। বিশ্বের বড় সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ তৈরি হচ্ছে এখানেই।”
‘ডিজিটাল ভারত’-এর অন্যতম স্তম্ভ হতে চলেছে জিসিসি
প্রতিনিধিদের মতে, ভারত শুধু প্রযুক্তি গ্রহণ করছে না, বরং প্রযুক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠছে। ক্লাউড-নেটিভ অপারেশন, জেনারেটিভ AI, সাইবার ইন্টেলিজেন্সের মতো প্রযুক্তি এখন এই কেন্দ্রগুলির সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে পরিষেবা খাতে ভারতের আধিপত্য আগামিদিনে আরও বাড়বে। জিসিসি কেবল অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান নয়, বরং এক নতুন ভারতের গল্প। যেখানে বিশ্ব আজ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ভারতের বিশ্লেষণ দেখে, পরামর্শ নিচ্ছে ভারতের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। ২০৩০-এর এই ভিশন সফল হলে, ভারতের অর্থনৈতিক মানচিত্রে আরও এক যুগান্তকারী পালক যোগ হবে — এবং সেই পথ দেখাচ্ছে জিসিসি।