বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু মহিলাদের উপর নির্যাতন যেন থামছেই না। কুমিল্লার গণধর্ষণের ঘটনায় এখনও দেশজুড়ে ক্ষোভ চলাকালীন, এবার বরিশালের ভোলা হাইওয়ের ধারে পলিথিনে মোড়া, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক হিন্দু মহিলাকে উদ্ধার ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মহিলার শরীরের বিভিন্ন অংশ অ্যাসিডে ঝলসে দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। শনিবার ভোরে বরিশালের তালুকদারহাট এলাকায় ভোলা হাইওয়ের ধারে এক প্লাস্টিকে মোড়া মহিলার দেহ প্রথম দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই প্রথমে ভাবেন, হয়তো মৃতদেহ। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করলে বোঝা যায়, তিনি তখনও জীবিত। তাঁকে দ্রুত শের-এ-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন।
ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা?
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাঁর উপর ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা হয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। হাত-পা শক্ত করে বাঁধা, দেহে অ্যাসিডে পোড়ার চিহ্ন এবং রাস্তার ধারে পলিথিনে মুড়ে ফেলে যাওয়ার পদ্ধতি এই তত্ত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। বরিশাল বন্দর থানার তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টির তদন্ত শুরু হয়েছে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
হাসপাতাল সূত্রে যা জানা গেছে
শের-এ-বাংলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মহিলা মধ্যবয়স্ক। শরীরে একাধিক স্থানে অ্যাসিড পোড়ার দাগ রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয়, এই অবস্থাতেও তিনি বেঁচে রয়েছেন এবং ধীরে ধীরে সাড়া দিচ্ছেন চিকিৎসায়। এই ঘটনার আগে কুমিল্লায় গণধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল। ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘু সুরক্ষা নিয়ে একাধিক বার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনও দৃশ্যমান পরিবর্তন নেই। বরং একের পর এক ঘটনায় স্পষ্ট, মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির দৌরাত্ম্য ভয়ানক রকম বেড়েছে।
প্রশাসনের ব্যর্থতা, না কি মৌন সম্মতি?
হিন্দু মহিলাদের উপর এই ধরনের পদ্ধতিগত অত্যাচার বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। তবে ইউনূস সরকারের আমলে এহেন ঘটনার ঘনঘন পুনরাবৃত্তি প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলির বক্তব্য, এই ধরণের বর্বরতা বন্ধ করতে সরকারের সদিচ্ছার অভাবই মূল সমস্যা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিগ্রহ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল নজর রাখছে। কুমিল্লার ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ একাধিক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এবার বরিশালের ঘটনার পর নতুন করে চাপ তৈরি হতে পারে ইউনূস সরকারের উপর। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর এই ধারাবাহিক নির্যাতনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকাই এখন প্রশ্নের মুখে। বরিশালের এই ঘটনা শুধু একটি isolated case নয়, এটি একটি ধারাবাহিক প্রবণতার অংশ, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।