মাত্র ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ড। হ্যাঁ, এই কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানই হয়তো দক্ষিণ এশিয়াকে একটি বিধ্বংসী পারমাণবিক যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। সম্প্রতি এক প্রাক্তন পাকিস্তানি মন্ত্রীর দাবিতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার উত্তেজনার পারদকে এক নতুন স্তরে নিয়ে গেছে। তাঁর মতে, ভারতের ছোঁড়া একটি ব্রহ্মস মিসাইল পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করার পর, সে দেশের সেনাবাহিনীর হাতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় ছিল এটা বোঝার জন্য যে মিসাইলটি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করছে কিনা। এই সামান্য সময়ের মধ্যেই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে পরিস্থিতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারত, তা সহজেই অনুমেয়।
অপারেশনের প্রেক্ষাপট ও কারণ
এই ঘটনাটি ছিল ভারতের চালানো ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর একটি অংশ। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে হওয়া এক নৃশংস জঙ্গি হামলার জবাবে ভারত এই সামরিক অভিযান চালায়। ওই জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছিল, যা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেয়। এরপরেই ভারত অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পাল্টা আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারই ফলস্বরূপ ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করা হয়। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের মাটিতে সক্রিয় থাকা বিভিন্ন জঙ্গি ঘাঁটি এবং তাদের মদতদাতা পাকিস্তানি সামরিক পরিকাঠামোকে ধ্বংস করা।
ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, এই অভিযানে তারা অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। लष्কর-ই-তৈবা (LeT), জইশ-ই-মোহাম্মদ (JeM) এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো একাধিক জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানে ১০০ জনেরও বেশি জঙ্গিকে নিকেশ করা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়। ভারতের এই অতর্কিত এবং ব্যাপক হামলায় কার্যত হতচকিত হয়ে পড়ে পাকিস্তান।
উত্তেজনা প্রশমনে কার ভূমিকা?
এই চরম উত্তেজনার মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। পাকিস্তানের প্রাক্তন মন্ত্রী দাবি করেছেন যে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের ফলেই পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং দুই দেশ একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের থেকে পিছু হটে। যদিও ভারত এই দাবি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লির বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এতে কোনো ভূমিকা ছিল না। বরং, ভারতের কঠোর অবস্থান দেখে পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (DGMO) নিজে থেকেই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং উত্তেজনা প্রশমনের জন্য উদ্যোগী হন।
Pakistan begged Trump for a ceasefire after Indian Brahmos (Harmus) hit Noor Khan Airbase and Pak forces had no time to react.
– Admission of Pakistan’s defeat by Sp Assistant to Pak PM Rana Sanullahpic.twitter.com/vRnDxEwqCv
— Pakistan Untold (@pakistan_untold) July 3, 2025
চার দিনের সংঘাত এবং যুদ্ধবিরতি
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এই তীব্র সংঘাত প্রায় চার দিন ধরে চলেছিল। মিসাইল হামলা এবং পাল্টা হামলার আশঙ্কায় গোটা অঞ্চলের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অবশেষে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক বিপর্যয়ের মেঘ কেটে যায়। যদিও এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসে একটি গভীর ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে এবং বুঝিয়ে দিয়েছে যে, পরিস্থিতি কতটা ভঙ্গুর এবং যেকোনো মুহূর্তে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।