সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল শিয়ালদা চত্বর। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, হকের চাকরি ফেরতের দাবিতে অর্ধনগ্ন মিছিলে সামিল হতে চেয়েছিলেন চাকরি হারা শিক্ষকরা। কিন্তু আন্দোলনের শুরু হতেই তার আগেই পৌঁছে গেল কলকাতা পুলিশ। অনুমতি না থাকার অজুহাতে একের পর এক প্রতিবাদকারীকে টেনে হিঁচড়ে তোলা হল প্রিজন ভ্যানে।
‘দাঁড়িয়ে ছিলাম, তাও নিয়ে গেলেন কেন?’—প্রশ্নে থমকে গেল সকাল
মিছিল শুরুর আগেই শিয়ালদা স্টেশনের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন দুই মহিলা চাকরিপ্রার্থী। পুলিশের আচরণে ভীত, তবু শান্তভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎই কয়েকজন পুলিশ এগিয়ে এসে তাঁদের টেনে তোলে গাড়িতে। তাঁরা চিৎকার করে বললেন, “সরে যেতে বলেছিলেন, সরে গেছি… তাও নিয়ে যাচ্ছেন কেন?” কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি।
নজিরবিহীন নিরাপত্তা, জমায়েত দেখলেই ধরপাকড়
শিয়ালদার চারপাশ জুড়ে ছিল চূড়ান্ত পুলিশি নিরাপত্তা। চারটি ডিভিশনের ডিসি (DC) নিজে উপস্থিত ছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কোনও রকম জমায়েতের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় গ্রেপ্তার অভিযান। রেলস্টেশন ও মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীদের প্রশ্ন করা হয়, তাঁরা কি SSC ২০২৬ প্যানেলের চাকরি হারা প্রার্থী? সন্দেহ হলেই তুলে দেওয়া হয় প্রিজন ভ্যানে।
‘মিছিল চাই না, চাকরি ফেরত চাই’—অবিচারের বিরুদ্ধে নীরব হাহাকার
চাকরি হারা শিক্ষকরা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন—নতুন করে পরীক্ষা নয়, চাই আগের নিয়োগে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে SSC নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, ‘এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বেআইনি ছিল, আবার পরীক্ষা নয়—চাই আমাদের হকের চাকরি।’
প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা, প্রতিবাদের ভাষা আটকে গেল পুলিশের দড়িতে
অনুমতি ছাড়াই জমায়েত, অশান্তির সম্ভাবনা—এই কারণ দেখিয়ে পুলিশ যেভাবে প্রতিবাদীদের টেনে তুলেছে, তা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অনেকেই বলছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারও আজ হারাতে বসেছে সাধারণ মানুষ।
সকালের শিয়ালদা ছিল যেন এক ভয়ানক সিনেমার দৃশ্য। প্রশ্ন, কান্না, আর নিরবিচার পুলিশের চাপে থমকে গেল প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর। কিন্তু এতকিছুর পরেও আন্দোলন থেমে যাবে না—এটাই বলছেন আন্দোলনকারীরা।