গোটা বছরের অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে আগামী ৩ জুলাই থেকে। হিমালয়ের কোলে, বরফগুহার শিবদর্শনের উদ্দেশ্যে শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের অমরনাথ যাত্রা। চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত, অর্থাৎ একটানা ৩৮ দিন ধরে। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক তীর্থযাত্রী পাড়ি দিচ্ছেন এই কঠিন কিন্তু পবিত্র যাত্রাপথে।
দুটি রুট, আলাদা অভিজ্ঞতা
এই যাত্রার জন্য দু’টি নির্দিষ্ট পথ নির্ধারিত—বালতাল ও পহেলগাঁও।
-
বালতাল রুটটি তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত, প্রায় ১৪ কিমি পথ, একদিনে যাত্রা সম্পূর্ণ করা যায়।
-
পহেলগাঁও রুটটি ৩২ কিমি, কিছুটা দীর্ঘ ও ধীরগতি, কিন্তু প্রকৃতির অপরূপ রূপ এখানে বেশি ধরা দেয়।
কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করবেন?
রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে ১৪ এপ্রিল থেকে। অনলাইনে আবেদন করতে হয়, যেখানে আবেদনপত্রের সঙ্গে একটি স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট দাখিল বাধ্যতামূলক। প্রতি আবেদনকারীর জন্য নির্ধারিত ফি ₹২২০। পাশাপাশি, RFID কার্ড গ্রহণ করা আবশ্যক, যার জন্য অতিরিক্ত ₹২৫০ খরচ পড়ে।
বয়স ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশিকা
যাঁদের বয়স ১৩ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে, এবং যাঁদের গুরুতর হৃদ্যন্ত্র বা ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা নেই, তাঁরাই এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৫,০০০ তীর্থযাত্রীকে যাত্রা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং নিরাপত্তা বজায় থাকে।
থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা
দুই রুটেই তীর্থযাত্রীদের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট আবাসন—অন্তরীক্ষিত তাঁবু, হাট, এমনকি কিছু ফ্রি শেল্টার।
-
তাঁবুতে শেয়ারিং আবাসনের খরচ গড়ে ₹৫০০।
খাবারের জন্য রয়েছে সরকার অনুমোদিত রেশন ডিপো, চা-স্টল, ও লঙ্গর—যেখানে বিনামূল্যে প্রসাদ পরিবেশন করা হয়।
যাতায়াত ও খরচের হিসেব
জম্মু থেকে বালতাল বা পহেলগাঁও পৌঁছতে গাড়িভাড়া—
-
শেয়ারিং ট্যাক্সি ₹৮০০–১,০০০,
-
নিজস্ব ট্যাক্সি ₹৩,০০০–৪,০০০,
-
বাসে ₹৭০০।
পাহাড়ি পথে চলার জন্য পনি ₹২,৫০০–৫,০০০, পালকি ₹৮,০০০ খরচ হতে পারে। হেলিকপ্টার পরিষেবাও উপলব্ধ।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো
সম্প্রতি কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়ায় প্রশাসনের তরফে নেওয়া হয়েছে কড়া পদক্ষেপ। ৫৮,০০০ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন, রয়েছে ১০৬টি শেল্টার হোম। এর মধ্যেই এখনো পর্যন্ত ৩.৩১ লক্ষেরও বেশি তীর্থযাত্রী রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। অমরনাথ যাত্রা কেবল ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, আত্মনিয়ন্ত্রণ, সাহস ও সংকল্পেরও প্রতীক। তুষারগুহার প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে ভক্তরা অনুভব করেন এক অনির্বচনীয় শুদ্ধি ও আত্মিক প্রশান্তি। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় এবছরও সেই ঐতিহ্য বজায় থাকবে বলেই আশা তীর্থযাত্রীদের।