Child Labour : গুজরাতের রাজকোটের বেদিয়াচক এলাকার একটি সোনার দোকানে হানা দিয়ে উদ্ধার হল পশ্চিমবঙ্গের ১৯ জন নাবালক। রাজকোট পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ (SOG)-এর এই অভিযান রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। দোকানের অন্দরমহলে ছিল না আলো-বাতাস, ছিল না কোনও স্বাভাবিক থাকার পরিবেশ। অথচ, দিনের পর দিন ওই শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছিল।
নির্যাতনের ছাপ স্পষ্ট শিশুদের হাতে-পায়ে
উদ্ধার হওয়া শিশুদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। কেউ বলছে, ভুল করলেই মার, কেউ আবার জানিয়েছে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হতো। পুলিশ সূত্রে খবর, দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারিত হচ্ছিল তারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কিশোর, আবার কারও বয়স মাত্র ১১–১২ বছর। একজন শিশু তো কাঁদতে কাঁদতে বলে— “আমাকে বলেছিল ভাল কাজ আছে, কিন্তু এখানে এনে হাত-পা বেঁধে কাজ করায়!”
পশ্চিমবঙ্গ থেকে কীভাবে নিয়ে যাওয়া হল?
সূত্রের খবর, এই ১৯ জন নাবালক পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলি— বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া থেকে ‘চাকরি দেওয়ার নাম করে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল গুজরাতে। তাতে জড়িত থাকতে পারে একটি চক্র। যাদের কাজই হল দারিদ্র্যপীড়িত পরিবারগুলিকে টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের সন্তানদের বাইরে পাঠানো।
কাজের নাম করে আসলে শিশু শ্রম, নেই কোনও আইনি নথি
এই শিশুদের কোনও নিয়োগপত্র নেই, নেই সরকারি শ্রমিক হিসেবে নাম নথিভুক্ত। সোনার দোকানের পিছনের একটি ছোট ঘরে দিনে ১৪-১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হচ্ছিল। অলংকারে পলিশ দেওয়া, সোনার পাত কাটা, এমনকি ভারী যন্ত্রপাতি চালানো পর্যন্ত করানো হতো তাদের দিয়ে। যা একেবারে শিশু শ্রম আইন ভঙ্গ করার সামিল।
পুলিশ কী বলছে এই ঘটনার তদন্ত নিয়ে?
রাজকোট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনার মূল চক্রীদের খোঁজ চলছে। প্রাথমিকভাবে দোকানের মালিক এবং দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। শিশুদের বর্তমানে উদ্ধার করে সরকারি হোমে রাখা হয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে খবর পাঠানো হয়েছে যাতে অভিভাবকদের সঙ্গে তাদের পুনর্মিলন করা যায়।
কালনার ঘটনার পর আবারও আতঙ্ক!
মাত্র কিছুদিন আগে পূর্ব বর্ধমানের কালনার এক কিশোরকে গুজরাতে কাজে গিয়ে নির্মম অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল। এবার আরও ভয়ঙ্করভাবে সামনে এল আরও ১৯ জন শিশুর নির্যাতনের কাহিনি। দুই রাজ্যের প্রশাসনের মধ্যে ইতিমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এবং এই ধরনের ‘চাইল্ড ট্রাফিকিং চক্র’ গুঁড়িয়ে দিতে যৌথভাবে তদন্ত চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
অভিভাবকদের অজ্ঞানতায় বাড়ছে বিপদ
অনেক অভিভাবকই না জেনে, না বুঝেই কাজের প্রলোভনে শিশুদের দূরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের ঘটনার পেছনে সচেতনতার অভাবই মূল কারণ। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় দালালরা পরিবারগুলিকে বোঝাচ্ছে যে ‘এই কাজই ভবিষ্যৎ গড়ার রাস্তা’।
উল্লেখ্য, শিশুদের জীবনের মূল্য কোনও সোনার চেয়ে কম নয়। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতের ভিত্তিই নড়বড়ে হয়ে যাবে। সমাজ, প্রশাসন ও পরিবার— সবার দায়িত্ব নিতে হবে এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য।