Boeing 787 : আহমেদাবাদের আকাশে যে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে মৃত্যু হয়েছে ২৪১ জন যাত্রীর। এই বিমানটি ছিল ‘বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার’—একটি এমন মডেল যা গত কয়েক বছর ধরে বারবার দুর্ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। এই ধরনের মডেল আগেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মৃত্যুর কারণ হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই মডেলেরই আর একটি বিমান ভেঙে পড়ে, মৃত্যু হয় ১৮১ জন যাত্রীর।
যিনি আগেই সতর্ক করেছিলেন, তিনি আজ মৃত
এই ঘটনার ঠিক পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এসেছে—জন বারনেট। তিনি বোয়িং সংস্থার প্রাক্তন কোয়ালিটি কন্ট্রোল ম্যানেজার। তাঁর কাজ ছিল বিমানের নির্মাণ পর্যায়ে ত্রুটি খুঁজে বার করা। তিনি বহুবার সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, বলেন—বোয়িং ইচ্ছাকৃতভাবে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করছে শুধু ডেডলাইনের মধ্যে বিমান ডেলিভারি করতে ও মুনাফা বাড়াতে। তিনি জানান, এই নির্মাণ ত্রুটিগুলো বিপজ্জনক, এবং একদিন বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলে, এবং তিনি হয়ে ওঠেন একজন ‘হুইসেলব্লোয়ার’—অর্থাৎ, ভিতরের দুর্নীতির তথ্য বাইরে প্রকাশ করা ব্যক্তি।
আচমকা মৃত্যু: আত্মহত্যা নাকি কিছু লুকোনো সত্য?
২০২৪ সালের মার্চে এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে হোটেল ঘর থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তিনি সেই সময় এক বড় মামলায় সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছিলেন। ফলে অনেকের ধারণা, এই মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নয়। জন বারনেট যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে হয়তো বোয়িং-এর বিরুদ্ধে আরও বড় তথ্য সামনে আসত।
একই মডেল, একই সমস্যা, তবুও ব্যবহারে ছাড় নেই!
আহমেদাবাদে যে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে, সেটিও ঠিক সেই বোয়িং ৭৮৭ মডেল। প্রশ্ন হল—যেখানে এই মডেল নিয়ে আগেই এত অভিযোগ, এত দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানেও কেন এই বিমান ভারতীয় আকাশে উড়ছে? বোয়িং সংস্থা এখনও পর্যন্ত এই দুর্ঘটনা নিয়ে কোনো স্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি, যা আরও সন্দেহ বাড়াচ্ছে।
ভারতের প্রশ্ন: নিরাপত্তা না ব্যবসা?
এই দুর্ঘটনার পর এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন—ভারত কি সত্যিই বোয়িং-এর উপর নির্ভর করতে পারে? আর কত প্রাণ হারালে বোঝা যাবে, প্রযুক্তি নয়, আগে দরকার যাত্রী নিরাপত্তা? ভারতের মতো জনবহুল দেশে, যেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ বিমান চড়েন, সেখানে এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্লেন চালু রাখা কতটা যৌক্তিক?
উল্লেখ্য, বোয়িং ৭৮৭ একসময় ‘ড্রিমলাইনার’ হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু আজ তা যেন হয়ে উঠছে ‘ডেথলাইনার’। একের পর এক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও এক হুইসেলব্লোয়ারের রহস্যমৃত্যু—সব মিলিয়ে বোয়িং-এর আকাশযাত্রা এখন চরম প্রশ্নের মুখে। এই ঘটনার পর ভারত সরকার ও বিমান সংস্থাগুলির উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে।
View this post on Instagram