দেশের শাসন কাঠামোর ভারসাম্য নিয়ে আবারও উঁকি দিল প্রশ্ন। এই বিতর্কের মাঝেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ব্রুজন গাভাই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন—ভারতের সবচেয়ে বড় কর্তৃত্ব সংসদ নয়, সংবিধান।
সংবিধানই সর্বোচ্চ, সংসদ নয়—সাফ বক্তব্য প্রধান বিচারপতির
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে উঠে এসেছে ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোর মূল স্তম্ভ—আইনসভা, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা—তিনটি স্তম্ভই যে সংবিধানের আওতায় কাজ করে, সেটাই বারবার স্পষ্ট করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংসদ যদি সংবিধান সংশোধন করেও, তবে সেটি ‘বেসিক স্ট্রাকচার ডকট্রিন’ অক্ষুণ্ণ রেখেই করতে হবে। কারণ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোই ভারতের গণতান্ত্রিক চরিত্রের রক্ষাকবচ।
সরকার-বিরোধিতা নয়, সংবিধান রক্ষাই বিচারপতির দায়িত্ব
গাভাই আরও বলেন, অনেক সময় দেখা যায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে শুধুমাত্র সরকারবিরোধী রায় দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবটা তার থেকেও গভীর। একজন বিচারপতির আসল কর্তব্য হল সংবিধানের মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার রক্ষা করা। এর জন্য প্রয়োজন নীতিনিষ্ঠতা, সততা এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি।
‘Bulldozer Justice’-এর বিরুদ্ধে বার্তা
বর্তমানে একাধিক রাজ্যে দমনমূলক নীতিতে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছে। এই প্রসঙ্গেই ‘Bulldozer Justice’-এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, আবাসনের অধিকার সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। সে অধিকার ক্ষুন্ন হলে, আদালতের দায়িত্ব নাগরিকদের রক্ষা করা।
বিচারপতিদের সিদ্ধান্তে জনমতের প্রভাব থাকা উচিত নয়
বিচারপতিদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আদালতের রায় জনমত বা জনচাপের ভিত্তিতে হওয়া উচিত নয়। রায় আসা উচিত যুক্তি, আইন ও সংবিধান অনুযায়ী। আদালতের স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখতে গেলে বিচারপতিদের সেই দায়বদ্ধতা মেনে চলতে হবে।
শীর্ষপদে উঠে আসা একটি প্রতীকী বার্তা
১৪ মে ২০২৫-এ প্রধান বিচারপতির পদে শপথ নিয়েছেন বিচারপতি গাভাই। দেশের অন্যতম সংবেদনশীল সময়ে এই পদে বসে সংবিধান ও বিচারব্যবস্থার স্বতন্ত্রতা রক্ষার বার্তা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, তিনটি শাসনস্তম্ভের মধ্যে সুসমন্বয় থাকা যেমন দরকার, তেমনই প্রত্যেকটি স্তম্ভের সংবিধাননিষ্ঠ ভূমিকা বজায় থাকা জরুরি।
