TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

১৯৭৫-৭৭ ভারতের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়! কি করে ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী? জানুন অজানা ইতিহাস

১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক সংকট থেকে শুরু হয় ২১ মাসের জরুরি অবস্থা। নাগরিক অধিকার হরণ, সংবাদমাধ্যমে সেন্সর, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা খর্ব—সব মিলিয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক ভয়াবহ অধ্যায়।

Debapriya Nandi Sarkar

একটা রাজনৈতিক রায় কীভাবে গোটা দেশের গণতন্ত্রকে প্রায় স্তব্ধ করে দিয়েছিল—তা আজও ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক ভয়াবহ স্মৃতি। ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন রাতারাতি দেশজুড়ে জারি হয়েছিল ‘জরুরি অবস্থা’—একটা সিদ্ধান্ত, যা প্রায় দুই বছর ধরে মানুষের মৌলিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক কাঠামোকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

জরুরি অবস্থার সূত্রপাত

১৯৭১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। ১৯৭৫ সালের জুনে এলাহাবাদ হাই কোর্ট তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে নির্বাচনী পদ খারিজ করে। এর পরেই দেশে ‘অভ্যন্তরীণ বিপর্যয়’-এর অজুহাতে সংবিধানের ৩৫২ নম ধারা প্রয়োগ করে ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন জরুরি অবস্থা। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।

গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ

জরুরি অবস্থার সময় দেশের প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি রাজনৈতিক কর্মী ও সরকার-বিরোধী ব্যক্তিকে বিনা বিচারে আটক করা হয়। চালু হয় সেন্সরশিপ, সংবাদমাধ্যমে থেমে যায় সরকারের সমালোচনা। নাগরিকদের অধিকারের উপর কাঁচি চালায় সরকার। পুলিশি নজরদারি ও দমনপীড়নের মাধ্যমে বিরোধী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়।

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

আইন সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ

এই সময়ে সংবিধানে আনা হয় দুটি বড় সংশোধনী—৩৯তম ও ৪২তম। এর মধ্যে ৩৯তম সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রী ও কয়েকজন শীর্ষপদাধিকারীর নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আদালতের আওতার বাইরে রাখা হয়। আর ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা খর্ব করে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় কেন্দ্রীয় সরকারে। রাজ্য সরকারগুলিকে বরখাস্ত করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ভয়ের আরেক নাম—‘ফোর্সড স্টেরিলাইজেশন’

জরুরি অবস্থার সময় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে সঞ্জয় গান্ধীর উদ্যোগে লক্ষ লক্ষ পুরুষকে জোর করে বন্ধ্যত্ব করানো হয়। এর জন্য দেওয়া হত কোটা—পূরণ না করলে চাকরি খোয়া যাওয়ার হুমকি, পুলিশি হেনস্থা চলত সরকারি কর্মীদের ওপরও। বহু সাধারণ মানুষ এই অভিযানে হয়রানির শিকার হন।

কবে শেষ হল জরুরি শাসন?

১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে, জনগণের চাপে ও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মুখে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন ইন্দিরা গান্ধী। সেই নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়। ক্ষমতায় আসে জনতা দল, এবং তাঁরা ৪৩তম ও ৪৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনেন, নাগরিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়।

আজও রয়ে গেছে প্রতিধ্বনি

ভারতের গণতন্ত্র সেই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঠিকই, কিন্তু আজও ১৯৭৫-এর সেই সময়কাল স্মরণ করায়, কীভাবে একটি রাজনৈতিক সংকট গোটা সংবিধান, নাগরিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক কাঠামোকে বিপর্যস্ত করতে পারে।