বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল, চিন-পাকিস্তানের সক্রিয়তা, আর ভারতের ভবিষ্যৎ কূটনীতি—এই তিনের মেলবন্ধনেই এবার রণনীতি বদলাচ্ছে দিল্লি। সম্প্রতি শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটির এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন একাধিক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশে ইউনূস সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক—‘রিসেট’ চায় দিল্লি?
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলতি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে। তবে দিল্লির বার্তা স্পষ্ট—পাকিস্তানের মতো ‘শত্রু’ নয়, বরং নতুন বাস্তবতাকে মান্যতা দিয়েই গড়ে তুলতে হবে সম্পর্ক।
বিদেশ মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছেন শিবশঙ্কর মেনন (প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা), সৈয়দ আতা হাসনাইন (অবসরপ্রাপ্ত সেনা জেনারেল), রেবা গাঙ্গুলি দাস (প্রাক্তন হাইকমিশনার) এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অমিতাভ মাট্টু। তাঁদের সাফ মত—ভারতকে বাংলাদেশের ভিতরে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক ও কূটনৈতিক স্তরে।
চিন-পাকিস্তানের ‘চুপিচুপি’ সক্রিয়তা, কী বিপদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একদিকে যেমন চিন বন্দর ও বায়ুসেনা ঘাঁটির পরিকাঠামো গড়ে তুলছে, অন্যদিকে পাকিস্তান কূটনৈতিক ও সামরিকভাবে জোরদারভাবে সক্রিয়। এই দুই শক্তির মদতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য যে বদলে যেতে পারে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে দক্ষিণ ব্লকে।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্কই হতে পারে ভারতের ‘ট্রাম্প কার্ড’
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভারতীয় সমাজ ও প্রশাসনের সম্পর্ক যাতে ইতিবাচক হয়, সে দিকেই বিশেষ জোর দিতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনৈতিক দল বা সরকার নয়, বরং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সেতুবন্ধ গড়ে তোলা ভারতীয় কূটনীতির মূল চাবিকাঠি হতে পারে।
মিডিয়ার ভূমিকা নিয়েও সতর্কবার্তা, ‘হেডলাইন কূটনীতি’ এড়ানোর পরামর্শ
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একাংশের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রতি ‘নেতিবাচক চিত্র’ উপস্থাপন করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই দেশের সম্পর্কে অকারণে চাপ তৈরি হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সংবেদনশীল কূটনৈতিক বিষয়ে মিডিয়ার দায়িত্বশীল ভূমিকা কাম্য।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদল হঠাৎই আসেনি, তবে তার জেরে উপমহাদেশের কূটনীতিতে যে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দিল্লির সাম্প্রতিক বার্তা স্পষ্ট—বাংলাদেশকে ঘিরে আগের নীতি নয়, দরকার বাস্তবতাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ার ‘নতুন খেলা’। সেই খেলাতেই ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনই সুযোগও।