বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনে যদি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ইরানের তেল রপ্তানি, তাহলে ভারতের বাজারে পেট্রল ও ডিজেলের দামে লাগতে পারে অগ্নি। তেলের উপর নির্ভরশীল অর্থনীতির দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে প্রতিটি সাধারণ মানুষের পকেটেই তার আঁচ পৌঁছবে, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বাড়ার আশঙ্কা
বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল $65-এর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু ইরান যদি তার দৈনিক প্রায় ১.১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেই দাম বেড়ে $75 থেকে $78-এ পৌঁছতে পারে। পরিস্থিতি যদি আরও জটিল হয়—যেমন হরমুজ প্রণালীতে চলাচলে বাধা পড়ে বা অঞ্চল জুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়—তাহলে মূল্য $120–$130 প্রতি ব্যারেলও হতে পারে বলে অনুমান করছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকেরা।
ভারতের জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ
ভারতের শক্তি চাহিদার একটা বড় অংশই আমদানি করা তেলের উপর নির্ভরশীল। ইরান থেকে তেল সরবরাহ বন্ধ হলে সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের পেট্রল ও ডিজেল মূল্যসূচকে। এর ফলে দেশের মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যেতে পারে। একইসঙ্গে, জিডিপির বৃদ্ধির হার ও চলতি হিসাব ঘাটতিও বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারের বিকল্প পরিকল্পনা
পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র ইতিমধ্যেই কিছু বিকল্প ভাবনায় এগোচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ বাড়ানো এবং পরিশোধিত পণ্য রপ্তানিতে কিছুটা রাশ টানা। পাশাপাশি, জরুরি মজুত (Strategic Reserve) থেকে তেল সরবরাহ বাড়িয়ে তাত্ক্ষণিক চাহিদা পূরণের ভাবনাও চলছে।
বাজারে প্রভাব কেমন পড়বে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান যদি রপ্তানি অর্ধেক করেও দেয়, তাহলে ব্রেন্টের দাম $85-এ পৌঁছাতে পারে। সম্পূর্ণ বন্ধ করলে তা $90-এর উপর উঠবে, এবং দীর্ঘমেয়াদে আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতি যদি চলতেই থাকে, তবে দেশের বাজারে পেট্রল ও ডিজেলের দাম এক ধাক্কায় ₹10–₹15 পর্যন্ত বাড়তে পারে।
চাপ পড়বে সাধারণের উপরেই
অর্থনীতির হিসেব যতই জটিল হোক, এর সরাসরি প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপরেই। পরিবহণ ব্যয় বাড়বে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে এবং সেইসঙ্গে জীবনযাত্রার খরচও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাবে।