পাকিস্তান নয়, লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে—এই বার্তাই আরও জোর দিয়ে পৌঁছে দিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ইউরোপ সফরের দ্বিতীয় দিনে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজ়া কাল্লাস-এর সঙ্গে বৈঠকের পর এক সাংবাদিক বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেন—“সন্ত্রাসবাদীদের তরফে কোনও উস্কানি এলে এবার ভারত পাকিস্তানের একদম ভিতরে ঢুকে প্রত্যাঘাত করবে।”এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কার্যত পাকিস্তানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিল নয়াদিল্লি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জোরদার কূটনৈতিক সম্পর্ক
সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে জয়শঙ্করের ছ’দিনের ইউরোপ সফর। সফরের লক্ষ্য শুধু সন্ত্রাস দমন নয়, বরং ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করাও। সফরে জয়শঙ্কর ঘুরবেন ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ-সহ একাধিক দেশে, যেখানে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
ইতিমধ্যেই উরসুলা-জয়শঙ্কর বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও ভারত-ইউরোপ অংশীদারিত্ব গভীর করার প্রস্তাব উঠেছে বলে সূত্রের খবর।
পহেলগাঁও হামলার বদলা: শুরু ‘অপারেশন সিন্দুর’?
২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২৬ জন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে ভারতীয় সেনা পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ন’টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে। এই প্রত্যাঘাতকে সরকার ‘অপারেশন সিন্দুর ২০২৫’ নামে চিহ্নিত করেছে বলে সরকারি সূত্রের দাবি।
জয়শঙ্করের বক্তব্য যেন সেই অভিযানের দ্বিতীয় পর্বের ইঙ্গিত। তাঁর মতে, ভারত এখন আর শুধুমাত্র প্রতিরক্ষায় নয়, প্রয়োজনে অগ্রসরমাণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।
গোটা বিশ্বে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বার্তা
জয়শঙ্করের হুঁশিয়ারি শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য। ভারত চাইছে যাতে আন্তর্জাতিক মহলও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একই রকম কড়া অবস্থান নেয়। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা-ও জানিয়েছেন, ভারত-ইইউ সম্পর্ক আগামী দিনে আরও গভীর কৌশলগত অংশীদারিত্বে রূপান্তরিত হবে।
নতুন ভারতের কূটনৈতিক ভঙ্গি
বর্তমান ভারত আগের মতো আর কূটনৈতিক নরম নীতি নিয়ে এগোয় না। বরং প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন, প্রত্যাঘাত ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে দৃঢ় অবস্থান—এই তিন অস্ত্রে ভর করেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। জয়শঙ্করের এই সফর এবং তাঁর বক্তব্য তা আরও একবার স্পষ্ট করল।
ইউরোপের মাটিতে দাঁড়িয়ে জয়শঙ্করের পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে করা ‘ভিতরে ঢুকে মারার’ হুঁশিয়ারি শুধু কথার কথা নয়, বরং ভবিষ্যতের আরও বড় অভিযানের বার্তা—যা ‘অপারেশন সিন্দুর’ পর্ব-২ হয়ে উঠতে পারে। ভারতের এই অবস্থান যে আন্তর্জাতিক মহলেও সমর্থন পাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে গেল ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়ায়।