TRENDS
হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গেল ল্যাপটপ? কী করবেন এখনই জেনে নিন
সাধ্যের মধ্যে সাশ্রয়ী বাইক খুজছেন! রইল ১ লাখের কমে সেরা কিছু সন্ধান

দুধ না পেয়ে শিশুকে ভরা তিস্তায় ফেলে দিলেন মা! জলপাইগুড়িতে হৃদয়বিদারক ঘটনা

জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে দুধ না পেয়ে খিদের জ্বালায় কাঁদতে থাকা দেড় বছরের ছেলেকে তিস্তায় ফেলে দিলেন এক মা। স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও প্রশ্ন উঠছে, জনকল্যাণ প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন এত অভাব?

Debapriya Nandi Sarkar

জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়িতে সোমবার সকালে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। শুধু খাবারের অভাবে, দুধ না পাওয়ায়, খিদের জ্বালায় কাঁদতে থাকা নিজের দেড় বছরের সন্তানকে তিস্তা নদীতে ফেলে দিলেন এক মা। ঘটনাটি ঘটেছে মরিচবাড়ি এলাকায়। নদীর ধারে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা শিশুটিকে উদ্ধার করেন। বর্তমানে ছেলেটি সুস্থ, তবে মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত মা সীমা বাওয়ালিকে ঘিরে উঠছে হাজারও প্রশ্ন। ঘটনার পর স্থানীয়রা সীমাকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন সীমা বলেন, “ওর বাবা সকালে বেরিয়ে গিয়েছিল। ঘরে দুধ নেই। ছেলে খিদের জ্বালায় সকাল থেকেই কাঁদছিল। কেউ তো খাবার দিয়ে যাবে না। তাই বললাম, চল তোকে নদীতে দিয়ে আসি।” সীমার কথায় ফুটে উঠছে এক গৃহবধূর চূড়ান্ত হতাশা ও অসহায়তা, যা একমাত্র খালি পেটের যন্ত্রণা আর অভাবই বুঝিয়ে দিতে পারে।

Advertisements
Whatsapp-color Created with Sketch. গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে এখনই যুক্ত হোন 👉🏻
Join Now

অভাবের গর্ভে জন্ম এক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তের

সীমা ও তার স্বামী বিপুল বাওয়ালি একটি অতি দরিদ্র পরিবার। বিপুল পেশায় কাঠ মিস্ত্রি। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর কোনও কাজ নেই। তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান ও দেড় বছরের পুত্রকে নিয়ে দিন গুজরান করা অসাধ্য হয়ে উঠেছিল। রবিবার রাত থেকেই শিশু সন্তান দুধ চাচ্ছিল, কিন্তু ঘরে দুধ ছিল না। কোনও প্রতিবেশী বা আত্মীয়র কাছ থেকেও সাহায্য পাননি সীমা। সোমবার সকালে সীমা একাই ছিল ঘরে। ছেলেকে কোলে নিয়েই গিয়ে দাঁড়ান ফুলে ওঠা তিস্তার ধারে। এক মুহূর্তেই নেমে এল বিভীষিকা।

নদীর ধারে ছিলেন গ্রামবাসীরা, বেঁচে গেল শিশুটি

ভাগ্য ভাল বলতে হবে—নদীর পাশে ছিলেন কিছু স্থানীয় যুবক ও মহিলা। তাঁরা তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন এবং সীমাকে ধরে ফেলেন। ঘটনার পর খবর দেওয়া হয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনকে। বর্তমানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি টিম ওই পরিবারটির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। তাদের খাবার, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেই জানা গিয়েছে।

Whatsapp-color Created with Sketch. সেরা খবরগুলো মোবাইলে পেতে এখনই যুক্ত হোন👉🏻
Join Now

প্রশ্নের মুখে সরকারের জনমুখী প্রকল্প

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে—রাজ্যে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘খাদ্য সাথী’, ‘সাবুজ সাথী’-সহ এত প্রকল্প থাকলেও কীভাবে একটি পরিবার এই পর্যায়ে পৌঁছে গেল? স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, “আমরা তো প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখি সরকার প্রচুর প্রকল্প চালাচ্ছে। তাহলে এই পরিবার কিছু পায়নি কেন? তদন্ত হওয়া উচিত।” ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জেলা প্রশাসনের তরফে পরিবারের জন্য খাবার, শিশুর চিকিৎসা ও মানসিক পরামর্শদাতার ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি পরিবারটি কীভাবে প্রকল্পের বাইরে রয়ে গেল তা খতিয়ে দেখা হবে।

মা নিজের সন্তানকে নদীতে ছুড়ে ফেলছেন — এই দৃশ্য কোনও কল্পকাহিনি নয়, জলপাইগুড়ির বাস্তব। সীমার কাজটা যেমন নিষ্ঠুর, তেমনই সমাজ ও প্রশাসনের চূড়ান্ত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবিও বটে। খিদের কান্না যদি এক মাকে এভাবে সন্তান ত্যাগে বাধ্য করে, তাহলে শুধু সীমা নয়, ব্যর্থ আমরা সবাই।