একটি শিশু। বয়স মাত্র চার। নাম আরুশি। স্বাভাবিকভাবে বাবার কাছে একটি ছোট্ট চকোলেটের বায়না করেছিল সে। কিন্তু সেই ছোট্ট চাওয়াই রাক্ষস করে তুলল বাবাকে। মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলায় নৃশংসভাবে খুন হল ৪ বছরের কন্যা সন্তান, অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, নেশার আধিক্য, পরিবারে ভাঙন, এবং শিশুদের নিরাপত্তা ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল?
রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে লাতুর শহরের উপকণ্ঠে। পুলিশ সূত্রে খবর, মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতেই ছিলেন অভিযুক্ত বালাজি রাঠোর। চার বছরের আরুশি তার বাবার কাছে চকোলেট চাইলে রেগে আগুন হয়ে যান তিনি। মেয়েকে গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। এরপর স্ত্রীর রেখে যাওয়া একটি শাড়ি নিয়ে সেটি গলায় পেঁচিয়ে দেন মেয়ের। শিশুটির দেহ নিথর হয়ে পড়ার পরও কিছু বুঝতে পারেননি তিনি। প্রতিবেশীরা প্রথমে গোটা ঘটনা লক্ষ্য করে পুলিশে খবর দেন।
কেন বাড়িতে ছিল না মা?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বালাজি দীর্ঘদিন ধরেই মদে আসক্ত। পরিবারে প্রায় প্রতিদিনই ঝগড়া, গালিগালাজ, এমনকি মারধর চলত। এই পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে স্ত্রী তাকে ছেড়ে বাপের বাড়িতে চলে যান। তবে চার বছরের মেয়েকে রেখে যান বাবার হেফাজতে, যা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
শিশুর মৃত্যু: মা কী বলছেন?
ঘটনার পর আরুশির মা ছুটে আসেন থানায়। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়ের করেন স্বামীর বিরুদ্ধে। বলেন, “আমার মেয়ে তো শুধু একটা চকোলেট চেয়েছিল! ওই মানুষটা বাবার নামে কলঙ্ক! আমি চাই ওর ফাঁসি হোক।” এই মামলায় খুনের ধারা (IPC Section 302) রুজু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
প্রতিবেশীরা কী জানালেন?
প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুযায়ী,
-
বালাজি রাঠোর ছিলেন অত্যন্ত বদরাগী এবং নিয়মিত মদ্যপ।
-
মেয়েকে মাঝেমধ্যেই চেঁচিয়ে তিরস্কার করতেন।
-
এমন নৃশংসতা কেউ ভাবতেও পারেননি।
একজন প্রতিবেশী বলেন,
“আরুশি ছিল খুব শান্ত মেয়ে। কীভাবে একটা বাচ্চাকে কেউ এমন করতে পারে!”
প্রশ্ন উঠছে— কে দায় নেবে শিশুদের নিরাপত্তার?
এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, একজন নেশাগ্রস্ত পুরুষের হাতে কেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ছোট্ট একটি শিশুকে?
-
কোথায় ছিল সমাজের নজরদারি?
-
পরিবার বা আত্মীয়রা কেন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেননি?
-
মাতৃসত্তার বিচ্ছিন্নতা কি আরও এক শিশুর জীবন কেড়ে নিল?
এই প্রশ্নগুলো কেবল লাতুর নয়, গোটা দেশের মানসিকতা ও সমাজব্যবস্থার দিকে আঙুল তোলে।
এই ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন সাধারণ মানুষ। তবে এর বাইরেও বড় প্রশ্ন— পরিবারে নেশা, সহিংসতা এবং অসুস্থ মানসিকতার ছায়ায় বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য আমাদের সমাজ ঠিক কী করছে?
আরুশির মৃত্যু শুধু একটি শিশুর হত্যাই নয়, আমাদের সমাজের ভাঙনের এক নির্মম প্রতিচ্ছবি।