বিশ্বরাজনীতির কঠিন সময়েও এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী ক্যারন কারনি। সম্প্রতি দু’জনের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উঠে এল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ রূপরেখা। পরমাণু শক্তি নয়, যুদ্ধ নয়—এই আলোচনা ছিল মূলত ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, পরিবেশ, এবং অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়ানো এক উন্নত ভবিষ্যতের দিশার কথা।
কোথায় জোর দিলেন দুই প্রধানমন্ত্রী?
বৈঠকে উভয় পক্ষই একমত হয়েছেন যে ক্লিন এনার্জি, ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, এলএনজি (LNG), খাদ্য নিরাপত্তা, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, উচ্চশিক্ষা, এবং সাপ্লাই চেন রেজিলিয়েন্স—এই সব খাতে দুই দেশের সহযোগিতা সময়ের দাবি। বিশেষত, পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার ও ডেটা ভিত্তিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা এবং কানাডার উচ্চ প্রযুক্তি ও সম্পদের মেলবন্ধনে, ভবিষ্যতে অনেক নতুন দিশা খুলতে পারে বলে মনে করছেন দুই নেতা।
বন্ধ আলোচনায় ফের প্রাণ
বৈঠকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল—দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা Early Progress Trade Agreement (EPTA) নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্ত। এই প্রাথমিক চুক্তি পরে গিয়ে পৌঁছতে পারে Comprehensive Economic Partnership Agreement (CEPA)-র মতো আরও বৃহৎ বাণিজ্যিক চুক্তিতে। EPTA নিয়ে আগে কয়েকদফা আলোচনা হলেও তা নানা কারণে থমকে গিয়েছিল। এবার প্রধানমন্ত্রীরা স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন, দুই দেশের কর্মকর্তারা যেন ফের আলোচনায় বসেন ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অগ্রগতি করেন।
মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক
এছাড়া, দুই নেতাই Indo-Pacific অঞ্চলে একটি “ফ্রি অ্যান্ড ওপেন” পরিবেশ গঠনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছেন। এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক ভারসাম্য রক্ষা করা, এবং চীনের আধিপত্য রুখতে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বার্তা মিলেছে মোদি-কারনি বৈঠক থেকে। ভারতের “অ্যাক্ট ইস্ট” নীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, কানাডাও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে সক্রিয় ভূমিকা নিতে আগ্রহী বলে স্পষ্ট হয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্র ও জনসংযোগে জোর
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যৌথ গবেষণা, ছাত্রবিনিময় কর্মসূচি, এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোবিলিটি, অর্থাৎ এক দেশ থেকে অন্য দেশে সহজ যাতায়াতের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় ছাত্র ও কর্মী কানাডায় রয়েছেন। তাই ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণে এই জনসংযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।
দুই দেশের বন্ধুত্বের নতুন অধ্যায়?
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক অস্থিরতার মধ্যে ভারত ও কানাডার এই আলোচনা শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। যদিও আগের সময়ে কিছু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল, এবার তার অনেকটাই মিটে গিয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
রাজনীতি যখন প্রায়শই বিভাজনের গল্প বলে, তখন এমন আলোচনা মনে করিয়ে দেয়—ভবিষ্যতের বিশ্ব হবে সহযোগিতার, উন্নয়নের ও প্রযুক্তিগত বৈপ্লবিক পরিবর্তনের। মোদি-কারনি বৈঠক সেই পথেই এক ছোট পদক্ষেপ—যা হয়তো ভবিষ্যতের বড় দিশা নির্ধারণ করতে চলেছে।
PM Modi and PM Carney discussed opportunities for future collaboration in areas such as clean energy, digital transformation, artificial intelligence, LNG, food security, critical minerals, higher education, mobility, and supply chain resilience. They reaffirmed their shared…
— ANI (@ANI) June 18, 2025