পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমশ উত্তপ্ত। আন্তর্জাতিক মহলেও তার প্রতিধ্বনি। ঠিক এই পরিস্থিতিতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ভারতের এক বড়সড় প্রতিরক্ষা মহড়া—নাম ‘অপারেশন শিল্ড’।
এই মহড়ায় শুধু সেনা বা আধা-সামরিক বাহিনীই নয়, সাধারণ মানুষকেও অংশ নিতে বলা হয়েছে। কারণ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সিমুলেশন, যেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নাগরিক সুরক্ষা ও সরকারের কার্যকারিতা একসঙ্গে মূল্যায়ন করা হবে।
সীমান্তবর্তী চার রাজ্যে একযোগে মহড়া
‘অপারেশন শিল্ড’ চালু হচ্ছে গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীর—এই চারটি রাজ্যে। এই রাজ্যগুলো পাকিস্তান সীমান্তের একেবারে লাগোয়া হওয়ায়, সেখানকার নিরাপত্তা এবং যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশাসন ও সশস্ত্র বাহিনী স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে মহড়া চালাবে। কোথায় আশ্রয় নিতে হবে, কীভাবে বিপদকালীন সাইরেন শুনে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে—সবই শেখানো হবে এই মহড়ায়।
কেন এই মকড্রিল? কী উদ্দেশ্য?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মহড়ার উদ্দেশ্য দুই স্তরের —
- যদি হঠাৎ করে সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে সেনা ও সাধারণ মানুষের সমন্বয়ে প্রস্তুতি কতটা রয়েছে, তা যাচাই করা।
- প্রতিবেশী দেশগুলিকে বার্তা দেওয়া, যে ভারত সবসময় প্রস্তুত।
কেন্দ্রীয় সরকারের এক কর্তা জানিয়েছেন, “এটি কোনও আতঙ্ক তৈরি করার জন্য নয়, বরং সতর্কতার বার্তা। যুদ্ধ না হোক, কিন্তু আমরা যেন সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকি, সেটাই এই মহড়ার মূল কথা।”
সাধারণ মানুষকে নিয়ে মহড়া—এই প্রথম নয়
যুদ্ধ মহড়া সাধারণত সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে এই মহড়ায় সাধারণ নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানানো হচ্ছে মহড়ার সময়সূচি, সাইরেন বাজলে কী করতে হবে, কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে—সব কিছুই শেখানো হচ্ছে বাস্তবসম্মতভাবে। এর ফলে শুধু সুরক্ষা নয়, মানুষের মধ্যে সচেতনতা এবং নিরাপত্তাবোধও বাড়ছে।
অপারেশন শিল্ড: বার্তা স্পষ্ট
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের মহড়া শুধুই দেশীয় সুরক্ষার প্রস্তুতি নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের কৌশলগত সংকেত। যেখানে সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাস ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, সেখানে ভারতের পক্ষ থেকে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—“আমরা প্রস্তুত”।
উল্লেখ্য, ‘অপারেশন শিল্ড’ হয়তো আজ একটা মহড়া, কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে ভারত একদিকে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঝালিয়ে নিচ্ছে, অন্যদিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে তার জঙ্গিপনা-মুক্ত, প্রস্তুত ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান। এই মহড়া শুধু বর্তমান পরিস্থিতির জন্যই নয়, ভবিষ্যতের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা মহল।