ভারতীয় সংসদে পাশ হল Finance Act 2025। এই আইনের ফলে দেশে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের জন্য বড়সড় নীতিগত পরিবর্তন কার্যকর করা হল। নতুন আইন অনুযায়ী, অবসরের পর কর্মীরা আর পাবেন না Dearness Allowance (DA) বৃদ্ধির সুবিধা এবং ভবিষ্যতের Pay Commission-এর অন্তর্গত কোনও বেনিফিট।
1982-র ঐতিহাসিক রায় এখন অতীত
১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছিল—সব অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকেই সমান সুবিধা দিতে হবে, যেকোনও সময় তাঁরা অবসর নিক না কেন। সেই রায়ের ভিত্তিতে পেনশনের পরিমাণ নির্ধারিত হত সর্বশেষ মূল বেতনের ৫০% হিসেবে।
কিন্তু Finance Act 2025 সেই রায়ের উপরেই কাঁচি চালাল। এখন থেকে সরকারের ইচ্ছামাফিক ঠিক হবে পেনশন বা ভাতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, এবং সেই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যৎ থেকে কার্যকর হবে, অতীতে নয়।
কোন সুবিধা থাকছে না অবসরপ্রাপ্তদের জন্য?
ভবিষ্যতের Pay Commission (যেমন 8th CPC) অনুযায়ী কোনও বর্ধিত সুবিধা আর প্রযোজ্য হবে না অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে।
আর পাবেন না DA (Dearness Allowance) বৃদ্ধি।
- সরকার চাইলে কোনও সুবিধা দিতে পারে, তবে তা পুরোপুরি তাদের বিবেচনায়।
- আইনিভাবে এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না, এমনই বলা হয়েছে নতুন আইনে।
- কোনও রেট্রোস্পেকটিভ (পশ্চাৎ কার্যকর) বেনিফিটও দেওয়া হবে না।
‘অসঙ্গত ও অবিচার’—চাপে সরকার, ক্ষোভে ফুঁসছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা
এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়েছে পেনশনভোগী সংগঠনগুলির মধ্যে। অনেকেই বলছেন, এটা ১৯৮২-র ঐতিহাসিক রায়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাঁদের মতে, এটা ‘পেনশন হারানো নয়, সম্মান হারানোর সমান।’
Finance Act কীভাবে কাজ করে?
প্রতি বছর বাজেট পেশের পরে সংসদে Finance Act পাশ হয়, যেখানে সরকার তাদের রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয়ের রূপরেখা আইনের মাধ্যমে কার্যকর করে। এবারের আইনটি শুধুমাত্র আর্থিক হিসাব নয়, পেনশন ব্যবস্থাকেও আমূল বদলে দিল।
Finance Act 2025 যে শুধুই একটি আর্থিক আইন নয়, তা এবার স্পষ্ট হয়ে গেল। এটি একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থাপনার অংশ, অন্যদিকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের জন্য এক ভয়ঙ্কর সংকেতও বয়ে আনল। বহু দশক ধরে গড়ে ওঠা পেনশন সংক্রান্ত ন্যায্যতা, আদালতের রায় ও সামাজিক স্বীকৃতির ভিত্তি—সব কিছুই প্রশ্নের মুখে।
সরকারের যুক্তি যেমন আর্থিক ভারসাম্য, তেমনই পেনশনভোগীদের প্রশ্ন—এটা কি তাঁদের ন্যায্য অধিকার হরণ নয়? সময় বলবে এই সিদ্ধান্ত কতটা টিকে থাকবে, কিন্তু একথা এখনই পরিষ্কার—ভারতের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চয়তার ধোঁয়ায় ঢাকা।