সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব সফরে গিয়ে একটি বড় মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়ে বিস্ময়কর মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, এখন দুই দেশ এতটাই ‘ভালো’ সম্পর্কে আছে যে তারা একসাথে বসে “রাতের খাবার খেতে” পারে। শুধু তাই নয়, তিনি দাবি করেন যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও যুদ্ধের পরিস্থিতি থেমেছে তার প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই। ট্রাম্প বলেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকার একটি “ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি” করিয়ে এনেছে এবং তিনি বাণিজ্যিক কৌশলের মাধ্যমেই এটা সম্ভব করেছেন।
“চলো ট্রেড করি”— ট্রাম্পের হাস্যরসের আড়ালে কূটনৈতিক বার্তা
সৌদি-আমেরিকা ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি বলেছিলাম, ভাই, ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ো না। বরং তোমরা যে জিনিস এত সুন্দর বানাও, সেটা একে অপরের সঙ্গে ট্রেড করো। দু’দেশেরই শক্তিশালী নেতা আছে। ওদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে।” তিনি আরো জানান, “যুদ্ধটা ছোট থেকে বড় হচ্ছিল, লাখ লাখ মানুষ মারা যেতে পারত। কিন্তু আমরা সেই ভয়াবহতা রুখে দিয়েছি।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “যদি সম্ভব হয়, আমরা চেষ্টাও করব যাতে দুই দেশ একদিন একসাথে বসে ডিনার করে। ভাবুন, কত ভালো একটা ছবি হবে সেটা!” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি নিজের প্রশাসনের কৃতিত্ব দাবি করেন এবং বলেন, এই ধরনের শান্তি প্রচেষ্টায় বাণিজ্যকেই কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি।
রেডিয়েশন লিক পাকিস্তানে?
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে একটি গোপন রিপোর্ট ঘিরে—যেখানে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানের কয়েকটি সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থানে রেডিয়েশন (বিকিরণ) লিক হয়েছে। এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেন—“আপনারা কি এই ঘটনা তদন্তে কোনও দল পাঠিয়েছেন পাকিস্তানে?” এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টমি পিগট সোজাসুজি উত্তর এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আমরা সবসময়ই সরাসরি আলোচনাকে উৎসাহ দিয়ে আসছি। প্রেসিডেন্ট বারবার বলেছেন—শান্তির পথ বেছে নেওয়ার জন্য দুই দেশের নেতাদের আমরা প্রশংসা করি।”
কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যে পারমাণবিক দুর্ঘটনা বা বিকিরণের গুজব ছড়িয়েছে—সেই বিষয়ে আমেরিকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। হোয়াইট হাউস শুধু বলেছে, “এই মুহূর্তে আমাদের জানানোর মতো কিছু নেই।”
রসিকতা ও কূটনীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে যেমন রয়েছে কিছুটা রসিকতা, তেমনই তার মন্তব্যের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে এক ধরনের কূটনৈতিক বার্তা। আবার অন্যদিকে, পাকিস্তানের পারমাণবিক সাইটে গুজব ছড়ানো লিকের বিষয়টি বিশ্ব নিরাপত্তার পক্ষে বড় হুমকি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি সত্যিই রেডিয়েশন লিক হয়ে থাকে, তবে তা শুধুমাত্র পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিপজ্জনক। আর যদি এটা গুজবও হয়, তাহলেও আন্তর্জাতিক মহলে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি।
এই প্রসঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকেও এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো পুরো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে সূত্রের খবর।