পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। একের পর এক নিশানাভেদী পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ছ’টি বিমানঘাঁটি, একাধিক রাডার বেস এবং সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এক কথায়, কয়েক দশকের মধ্যে এত বড়সড় সামরিক অভিযান আর হয়নি।
এই সংঘাতের শেষে যে তিনটি বড় মিথ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের নতুন অবস্থানকে স্পষ্ট করে দিল।
ভাঙল প্রথম মিথ: ‘পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে পাকিস্তান’
বরাবরই শোনা যেত, পাকিস্তানকে ছুঁলে পরমাণু অস্ত্রের ভয়ঙ্কর জবাব দেবে তারা। কিন্তু ভারত যখন পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে প্রতিক্রিয়া দিল, তখন পরমাণুর গর্জন একবারের জন্যও ফিরে এল না। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিজে মুখে স্বীকার করলেন না, এমন কোনও বৈঠকই হয়নি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে।
ভাঙল দ্বিতীয় মিথ: ‘চিন ভারতকে যুদ্ধের হুমকি দেবে’
এতদিন বলা হতো, পাকিস্তানে আঘাত করলে চিন ঝাঁপিয়ে পড়বে ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই ঘটল না। কার্গিল, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইকের মতোই এ বারও চিন কেবল বিবৃতি দিয়ে দায় সারল। ভারতের এই পদক্ষেপের সামনে একটিবারের জন্যও চিন সক্রিয় হয়নি। ভারতের আস্থা, এবং আঘাতের স্পষ্টতা চিনকেও নীরব থাকতে বাধ্য করল।
ভাঙল তৃতীয় মিথ: ‘চিনা অস্ত্র বিশ্বমানের’
পাকিস্তান যে মূলত চিনা প্রযুক্তিতে ভরসা করে, তা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই অভিযানে দেখা গেল, চিনা এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ভারতীয় মিসাইলের সামনে একেবারে অকার্যকর। চিনা ড্রোন মাঝ আকাশেই ধ্বংস হচ্ছে, ফাইটার জেটও কোনও কাজের না। ফলে, গোটা বিশ্বের সামনে চিনা অস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। অনেক দেশ তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনর্বিবেচনায় যেতে বাধ্য হচ্ছে।
সৌদি, আমেরিকা, চিন—সবাই চেয়েছে সংঘাত থামুক
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বলছেন, তাঁর মধ্যস্থতায় সংঘাত থেমেছে। সৌদি আরবও এই প্রথম পাকিস্তানের পাশে না দাঁড়িয়ে ভারসাম্যের ভূমিকা নিয়েছে। এমনকি চিনও বারবার যুদ্ধ থামানোর বার্তা দিয়েছে।
চিন আসলে নিজের অস্ত্রের মুখরক্ষা করতে চাইছিল। কারণ, চার রাত ধরে পাকিস্তানের চিনা ড্রোন ব্যর্থ হওয়া তাদের সম্মানেই ধাক্কা দিয়েছে।
পাকিস্তানের ডিজিএমও-র ফোনেই থেমেছে সংঘর্ষ
ভারতের বিদেশসচিব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—ভারত নয়, পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করেছিলেন সংঘর্ষবিরতির জন্য। ভারত যেহেতু নিজের ঘোষিত নীতির ভিতরেই ছিল, তাই সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়।
শুধু আন্তর্জাতিক চাপ নয়, ভয় ছিল পরবর্তী আঘাতে রাওয়ালপিন্ডিতে পাক সেনার সদর দফতরই গুঁড়িয়ে দেবে ভারত। মুখরক্ষার উপায় না পেয়ে, অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হল পাকিস্তান।
ভারতের ‘নতুন সমরতত্ত্ব’: সন্ত্রাস মানেই যুদ্ধ
এই প্রথম সরকারিভাবে ঘোষণা—ভারতের বিরুদ্ধে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলা মানেই যুদ্ধের ঘোষণার শামিল। আলোচনা নয়, প্রত্যাঘাতই হবে জবাব।
ভারত এবার স্পষ্ট বলেছে—যুদ্ধ থামিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এবার প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে আরও দ্রুত এবং কঠিন জবাব দিতে প্রস্তুত হতে হবে। আমেরিকার সহযোগিতা নিয়ে ভারত তার প্রতিক্রিয়া আরও দ্রুততর করে তুলবে।